মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললেই তাঁর পিছনে এজেন্সি লেলিয়ে তাঁকে ভয় দেখানোর চেষ্টা চালানো হয়। মোদী জমানায় বারবারই এই অভিযোগ করে এসেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দেশের অন্যান্য বিরোধী নেতা-নেত্রীরা। এই অভিযোগ যে আদৌ ভ্রান্ত নয়, আগেও মিলেছে তার প্রমাণ। সেই ধারা মেনেই এবার কেন্দ্রের নিশানায় নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসা! অতীতে বিভিন্ন মন্ত্রকে কাজ করার সময় বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থার স্বার্থে লাভাসা ‘অবৈধ প্রভাব’ খাটিয়েছিলেন কি না, হঠাতই তা খুঁজে বের করতে তৎপর হয়ে উঠেছে মোদী সরকার।
প্রসঙ্গত, লাভাসা হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি লোকসভা নির্বাচনের প্রচারপর্বে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের বিরুদ্ধে ওঠা আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ খারিজ করে দেওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন। লোকসভা নির্বাচনের আগে, গত মে মাসে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিলেন তিনি। নির্বাচনে আদর্শ আচরণবিধি ভঙ্গ নিয়ে বাকি দুই কমিশনারের সঙ্গে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল তাঁর। যা প্রকাশ্যে এসেছিল লাভাসারই এক বিস্ফোরক চিঠিতে। যেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘সংখ্যালঘু সিদ্ধান্ত’ নথিভুক্ত হচ্ছে না, তাই তিনি নিজেকে বৈঠক থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, মোদী-শাহদের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগের একটি ছিল, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইকের প্রসঙ্গ প্রচারে ব্যবহার করা। সেই সময় কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অতীতেও কখনও কমিশনের সংখ্যালঘু সিদ্ধান্ত নথিভুক্ত করা হয়নি। এরপর লাভাসা ফের সংবাদ শিরোনামে উঠে আসেন গত সেপ্টেম্বরে। তাঁর স্ত্রী নোভেল সিঙ্ঘল লাভাসার আয়কর রিটার্নে গরমিল থাকার অভিযোগে আয়কর দফতর নোটিস পাঠায় তাঁকে। বিভিন্ন কোম্পানির ডিরেক্টর পদে থাকা নোভেল আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
আর গত ২৯ আগস্ট দেশের ১১টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চিফ ভিজিল্যান্স অফিসারদের চিঠি লিখে কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে, ‘২০০৯-এর সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৩-র ডিসেম্বর পর্যন্ত আইএএস অশোক লাভাসা বিদ্যুৎ মন্ত্রকে যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব এবং বিশেষ সচিব হিসেবে কাজ করার সময় কয়েকটি সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দিতে অবৈধ প্রভাব খাটিয়েছেন কিনা তা খতিয়ে দেখতে।’ এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন, ন্যাশনাল হাইড্রোলিক পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেড, রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন কর্পোরেশন এবং পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেশন।
হঠাতই লাভাসার বিরুদ্ধে এ হেন ‘অ্যাকশন’ নেওয়ার ঘটনাটিকে মোদী সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থের চেষ্টা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের কথায়, নির্বাচনের পর থেকেই নির্বাচন কমিশনারের দুর্নীতি খুঁজে বের করতে এই তৎপরতা শুরু হয়েছে।