এর আগে দেশের অন্যতম প্রাচীন গবেষণাকেন্দ্র ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স -এর মূল ক্যাম্পাস আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসে গবেষক ও আগামী দিনের বিজ্ঞানীদের সামনে রীতিমত পুজোপাঠ ও হোমযজ্ঞ করতে দেখা গিয়েছিল কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হর্ষবর্ধনকে। নারকেল ফাটিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করার পাশাপাশি গণেশের মাহাত্ম্যও প্রচার করেছিলেন তিনি। আর এবার বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারের এক নম্বর হলে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী ভাষণ শেষ হতেই বারবার ধ্বনিত হল ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান!
মঙ্গলবার কলকাতায় হওয়া ওই অনুষ্ঠানটি ছিল আদ্যোপান্ত বিজ্ঞানের। নিজের ভাষণে মোদীও নিজেকে বিজ্ঞানের মধ্যেই সীমিত রেখেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বিদায় নিতেই হল ভরে গেল ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতে। বেশ কয়েকবার এমনই স্লোগান তুললেন গেরুয়া শিবিরের বিভিন্ন সংগঠনের তরফে যোগদান করা জনা কয়েক দর্শক। হলের মধ্যে হঠাত এমন ধ্বনি উঠল কেন? এর কোনও সদুত্তরই দিতে পারেননি আয়োজকরা। তবে নিখাদ বিজ্ঞানের উৎসব, যাতে যোগ দিতে এসেছেন দেশ-বিদেশের প্রতিনিধির দল, সেখানে এমন ধর্মীয় স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। বিজ্ঞানী থেকে সাহিত্যিক, গায়ক থেকে নাটকর্মী প্রত্যেকেই বিজ্ঞানের সম্মেলনে এমন স্লোগান ওঠার কথা শুনে একেবারে হতবাক।
যেমন ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স ফেস্টিভ্যালে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানের কথা শুনে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ অত্যন্ত বিরক্ত প্রকাশ করে বলেন, ‘এটা একটা বাতিকে দাঁড়িয়ে গিয়েছে দেখছি। সব জায়গায় এমন স্লোগানের অর্থ কী! বিজ্ঞান না বুঝলে এই ধরনের অনুষ্ঠানে আসার দরকার নেই। এটা বিজ্ঞানমনস্কদের অনুষ্ঠান।’ বিশিষ্ট সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ধর্মের সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনও বিভেদ নেই। কিন্তু, সব কিছুরই তো আলাদা জায়গা রয়েছে। এটা তো পুরোপুরি বিজ্ঞানের অনুষ্ঠান ছিল।’ গায়ক শ্রীকান্ত আচার্যও বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি মনে করি বিজ্ঞানের অনুষ্ঠান সবার জন্য নয়। যাঁরা এর মর্যাদা দেবেন, তাঁরা যাওয়াই ভালো।’
অনেকে বলছেন, মোদীর আমলে বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণায় বরাদ্দ কমেছে। তার বদলে স্টার্ট-আপ ব্যবসা ও প্রযুক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, বড় করে দেখানো হচ্ছে। গতকালের অনুষ্ঠানেও সেটাই চোখে পড়েছে। যদিও প্রযুক্তি নিয়ে বড়াই করলেও খোদ মোদীর বক্তৃতার সময়েই প্রযুক্তি বিভ্রাটের জেরে মিনিট দুয়েক বন্ধ হয়ে যায় তাঁর কথা। পরে ওই বিভ্রাটের জন্য দুঃখপ্রকাশ করতে হয় তাঁকে। আবার বিজ্ঞানের মঞ্চে যে মোদী ভাষণ দিচ্ছেন, তাঁর মন্ত্রীসভার একাধিক সদস্য এবং দলের নেতারাই বারবারই নানা ‘বিজ্ঞানমূলক’ তত্ত্ব আউরে হাসির উদ্রেক করেছেন। যার সর্বশেষ উদাহরণ, এ রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের দেশী গরুর দুধে সোনা থাকার তত্ত্ব। ফলে এ নিয়েও হাসি-ঠাট্টা করতে দেখা গেছে নেটিজেনদের।