বিরোধীরা প্রথম থেকেই বলে আসছে, বাণিজ্য চুক্তি করলে দেশজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট তীব্র হবে। অনেক মানুষ কাজ হারাবেন। চীনা দ্রব্যে ছেয়ে যাবে বাজার। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা মার খাবেন। এই আশঙ্কা যে আদৌ ভ্রান্ত নয়, অবশেষে তা টের পেতেই ১৬ দেশের বাণিজ্যচুক্তি থেকে সরে দাঁড়াল দেশের মোদী সরকার।
প্রসঙ্গত, সংসদের আসন্ন শীত অধিবেশনে সংসদের ভেতর ও বাইরে বিজেপিকে কোণঠাসা করতে ব্যাঙ্ককে ‘রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ’ বা আরসিইপি চুক্তি আলোচনাকে অন্যতম অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিল বিরোধীরা। তাঁদের মতে, এর ফলে চীনা পণ্যে ছেয়ে যাবে ভারত। চাকরি যাবে ভারতীয়দের। এর আগে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘও একই কারণে বিষয়টির বিরোধিতা করতে শুরু করে।
এ হেন সাঁড়াশি চাপের মুখে পড়ে সোমবার, দক্ষিণ পূর্বের ১৬ দেশের সঙ্গে আলোচনার শেষ মূহূর্তে, পিছিয়ে এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক প্রকার বাধ্য হয়েই ব্যাঙ্ককে তিনি জানিয়ে দিলেন, ভারত ওই বাণিজ্য চুক্তিতে শামিল হবে না। কারণ, অন্য দেশের পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক বসানোর অধিকার ও অন্য দেশে ভারতের পণ্য যাওয়ার পূর্ণ ব্যবস্থা করার দাবি মানা হয়নি। এই ঘটনাটিকে নিজেদের জয় বলেই মনে করছে বিরোধীরা।
এদিকে, সোমবার দিল্লীর যন্তরমন্তরে সারা ভারত কিসান সঙ্ঘর্ষ সমন্বয় সমিতির সভায় পোড়ানো হয় আরসিইপির কুশপুতুল। সেখানে কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লা বলেন, কৃষক, শ্রমিক ও ছোট ব্যবসায়ীদের বিরোধী এই চুক্তি কোনও ভাবে মানা হবে না। দেশ জুড়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে ফের মোদি সরকার নতুন করে জনবিরোধী চুক্তি করতে চলেছে। এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলন হবে।
অন্যদিকে, সোমবার দুপুরে দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে অর্থনৈতিক শ্লথগতি, বেকারত্ব, কৃষিতে দুরবস্থা এবং আরসিইপি নিয়ে ঘণ্টা দেড়েকের আলোচনার পর বিরোধীরা জানিয়েছেন, সংসদে বিরোধী ঐক্য যেমন অটুট রয়েছে, সংসদের বাইরে মোদী সরকারের ‘জনবিরোধী’ নীতির বিরুদ্ধেও একইভাবে জোটবদ্ধ হবে তারা। ১৩ দলের বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ, আহমেদ প্যাটেল, রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা, রাজীব শুক্লা, তৃণমূলের নাদিমুল হক, জেডি (এস)-এর ডি কে রেড্ডি, এলজেডি-র শরদ যাদব, ডিএমকে-র টি আর বালু, সিপিএমের টি কে রঙ্গরাজন, আরজেডি-র মনোজ ঝা, আরএলডি-র অজিত সিং, সিপিআইয়ের ডি রাজা-সহ অন্যান্যরা।
গুলাম নবি আজাদের অভিযোগ, গোটা বিশ্বে বেকারত্বের যা হার, ভারতে তার দ্বিগুণ। এর মূল কারণ ৩ বছর আগে দেশবাসীর ওপর মোদী সরকারের তুঘলকি ‘নোট বাতিল’ সিদ্ধান্ত এবং পরে অপরিপক্ব পণ্য ও পরিষেবা করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া। এই দুই সিদ্ধান্তের জেরে অল্পশিক্ষিত ও নিরক্ষর শ্রমিকেরাই সবচেয়ে বেশি কাজ হারিয়েছেন। গত ৫০ বছরে এমন বেকারত্ব দেখেনি ভারত।