ঠিক দুদিন আগেই কংগ্রেসের বিবৃতিতে নয়া মোড় নিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নজরদারি বিতর্ক। লোকসভা ভোটের সময় পেগাসাস স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর ফোনেও মোদী সরকার ‘আড়ি পেতেছিল’ বলে রবিবার দাবি করেছে হাত শিবির। এ নিয়ে যখন তোলপাড় গোটা দেশ, তখন ছত্তিসগড়ের একটি ফোন ট্যাপিং মামলার শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্যে ধরা পড়ল গোটা দেশের উদ্বেগের ছবি। বিচারপতিরা প্রশ্ন তুললেন, ‘কোথায় গোপনীয়তা? কী হচ্ছে এই দেশে?’
মামলাটি দায়ের করেছেন ছত্তিসগড়ের আইপিএস অফিসার মুকেশ গুপ্তা, যাঁর অভিযোগ, সরকার তাঁর এবং তাঁর পরিবারের বাকি সদস্যদের ফোনে আড়ি পেতে তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করেছে। এই মামলার শুনানি চলাকালীন সোমবার বিচারপতিদের কথায় ধরা পড়ল দেশজুড়ে চলা বিতর্কের বৃহত্তর ছবি। বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চ ছত্তিসগড় সরকারের কাছে জানতে চায়, ‘এভাবে কি কোনও নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করা যায়?’ ক্ষুব্ধ বিচারপতিরা এ প্রশ্নও তোলেন যে কার নির্দেশে এই নজরদারি চলেছে? কী এমন প্রয়োজন পড়েছিল যে ফোন ট্যাপ করতে হল?
যাবতীয় প্রশ্নের বিশদ ব্যাখ্যা-সহ হলফনামা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ভূপেশ বাঘেলের সরকারকে। তবে বিচারপতিদের কেউই সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপে নজরদারির প্রসঙ্গ তোলেননি। কিন্তু তাঁদের এ দিনের মন্তব্য দেশের সার্বিক পরিস্থিতির দিকেই ইঙ্গিত করছে বলে মনে করছে আইনজীবী মহল। আইপিএস অফিসারের হয়ে সওয়াল করতে উঠেছিলেন আইনজীবী মহেশ জেঠমালানি। বিচারপতিরা তাঁকে বলেন, বিষয়টিকে রাজনীতির রং না দিতে। একই সঙ্গে এই মামলায় ছত্তিসগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের নামও উল্লেখ না করতে বলা হয়েছে তাঁকে। এই মামলা সংক্রান্ত নথি থেকে মুখ্যমন্ত্রীর নাম বাদ দিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। অফিসারের আবেদনের প্রেক্ষিতে নোটিস পাঠানো হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে। সেখান থেকেও বাদ যাবে নাম।
মামলাটি অবশ্যই একটি রাজ্যকেন্দ্রিক। অভিযোগকারী সেই রাজ্যের এক আইপিএস অফিসার। তাঁর বক্তব্য, কয়েক বছর আগে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছিলেন তিনি। ক্ষমতায় পালাবদলের পর নতুন সরকার এসে তাঁকে বদলি করে দেয়। এবং তাঁর ও তাঁর পরিবারের ফোনে নজরদারি চালানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ারও আবেদন জানান তিনি। ঘটনাচক্রে এমন একটি সময়ে মামলাটির বিচার চলছে যখন হোয়াটসঅ্যাপে নজরদারি ঘিরে দেশজুড়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নিয়েছেন, একটি ইজরায়েলি সংস্থার তৈরি করা সফটওয়্যারকে কাজে লাগিয়ে নজরদারি চালানো হয়েছে শতাধিক ভারতীয়ের মোবাইল ফোনে।