কাশ্মীর ইস্যুতে দেশের পাশাপাশি যখন আন্তর্জাতিক স্তরেও সমালোচনার ঝড় বইছে, তখন মোদী সরকারের কাছে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার সামিল হয়েছে মণিপুরের ‘স্বাধীনতা’ ঘোষণা। আবার কেন্দ্রের ঘোষিত ডেটলাইন পার হয়ে গেলেও নাগা শান্তি-চুক্তিও এখনও বিশ বাঁও জলে। যার ফলে আরও মাথাব্যথা বেড়েছে তাদের।
এই অবস্থায় আলফা-সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে দ্রুত শান্তি-চুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে মোদী সরকারের মুখে। ইতিমধ্যেই দিল্লীতে দরবার করতে সেখানে উড়ে গেছেন আলফার নেতারা। তবে শান্তি-চুক্তি যে সহজে হবে না, সেটাও ভালই বুঝছেন আলোচনাপন্থী নেতারা। সবই যে ‘দিল্লীর খেলা’, তা বিলক্ষণ টের পাচ্ছেন উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষ। এরই মধ্যে মেঘালয়ে ‘বাইরের লোকেদের’ প্রবেশের ওপর জারি হয়েছে নতুন ফতোয়া।
প্রসঙ্গত, এনএসসিএন-এর আইএম গোষ্ঠীর সঙ্গে ৩১ অক্টোবরের মধ্যেই চুক্তির কথা বলেছিলেন মধ্যস্থতাকারী তথা নাগাল্যান্ডের রাজ্যপাল আরএন রবি। কিন্তু তিন মাস পিছিয়ে গেছে চুক্তির বিষয়টি। সেই সঙ্গে মণিপুরে দেখা দিয়েছে চরম উত্তেজনা। আসাম ও অরুণাচল প্রদেশেও চাপা উত্তেজনা রয়েছে। মণিপুর তো ইতিমধ্যেই ‘স্বাধীনতা’ ঘোষণা করেছে। কেন্দ্র বিষয়টিকে তেমন আমল দিতে না চাইলেও শুরু হয়েছে তীব্র আন্দোলন।
মণিপুরবাসীর আশঙ্কা, তাঁদের রাজ্যের নাগা-অধ্যুষিত এলাকা কেটে নাগালিম বা বৃহত্তর নাগাল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। একই আশঙ্কা রয়েছে অরুণাচল প্রদেশ ও অসমেও। অসম বা অরুণাচল এখনও শান্ত থাকলেও, উত্তেজনায় ফুটছে মণিপুর। মণিপুরিদের পাশাপাশি কুকিরাও আন্দোলনে নেমেছে। এই অবস্থায় কিছুটা বেসামাল পরিস্থিতি সামাল দিতে আলফার সঙ্গে দ্রুত শান্তি-চুক্তির কথা বলছে কেন্দ্র।
সোমবারই দিল্লীতে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলতে উড়ে গেছেন আলফার আলোচনাপন্থী দলের চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়া, সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেতিয়া, শশধর চৌধুরির মতো প্রথম সারির নেতা। তবে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হবে ডিসেম্বরে। এ প্রসঙ্গে অনুপ বলেন, ‘আলোচনা তো চলছে। মনে হয় না এত সহজে চুক্তি হবে।’ সেই সঙ্গে তিনি জানান, বেশ কিছু বিষয়ের এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। ক্যাব (সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল) নিয়েও আপত্তি রয়েছে আসামের মানুষের। তাই হুটোপাটি করে তাঁরা ‘ভুল’ কিছু করতে চান না।
তবে আলফারই অন্য নেতারা দ্রুত চুক্তির সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিতেই নারাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আলফার এক নেতা বললেন, ‘সবই দিল্লীর খেলা। নাগাল্যান্ডে ঘোল খেয়ে এখন আলফা নিয়ে দ্রুত চুক্তির কথা বলছে। দেখুন না কী হয়!’ তাঁর মতে, আলফা, এনএসসিএন, মণিপুরি বা বড়ো সংগঠনগুলির সঙ্গে বিরোধ বাধানোর কৌশল নিয়েছে কেন্দ্র।
যেমন, এনএসসিএন-এর নাগালিমের দাবিকে রুখতে কেন্দ্রীয় সরকার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে আলফা বা মণিপুরের বিভিন্ন সংগঠনের আপত্তিকে। ঠিক তেমন ভাবে আলফার দাবিও আটকে রাখা হচ্ছে অন্য সংগঠনের দোহাই দিয়ে। তাই সমস্যা সহজে মিটবে বলে তিনি মনে করেন না। বরং সমস্যাকে রাজনৈতিক কারণেই জিইয়ে রাখা হবে বলেই তাঁর ধারণা।