দুর্গাপুজো চলে গিয়েও আনন্দ উৎসবের রেশ থেকে যায়। আর সেই উৎসবের আমেজের পারদ আরও চড়িয়ে দেয় জগদ্ধাত্রী পুজো। মূলত চন্দননগর, কৃষ্ণনগর জগদ্ধাত্রী পুজোর ক্ষেত্রে আধিপত্য বজায় রাখলেও, ইদানীং কলকাতা, কল্যাণী-সহ বিভিন্ন জেলাতেও শুরু হয়েছে পুজো। আর আজ পুজোর অষ্টমীতে সকাল থেকেই ভিড় উপচে পড়ল চন্দননগরে।
দুর্গাপুজোর মতই পঞ্চমী থেকেই শুরু হয়ে যায় ঠাকুর দেখা। চন্দননগর মূলত বিখ্যাত অসাধারণ আলোকসজ্জা, প্যান্ডেলের অভিনবত্ব, অনন্য ভাবনার প্রতিমায়। যা দেখতে বলা চলে সারা বাংলার মানুষ ভিড় করেন সেখানে। এবারেও তাঁর ব্যতিক্রম হয়নি।
আজ সকাল থেকেই ভিড় চোখে পড়েছে বিদ্যালঙ্কার, বড়বাজার, পাইকপাড়া, চারমন্দিরতলা, বারাসাত, মানকুন্ডু, বোসপুকুর শীতলামন্দির ইত্যাদি বিখ্যাত পুজোগুলিতে। ভিড় হচ্ছে চন্দননগরের অন্যতম বিখ্যাত এবং জাগ্রত প্রতিমা তেঁতুলতলাতেও।
কেন্দ্রীয় কমিটি এ বার গুরুত্ব দিচ্ছে পরিবেশবান্ধব পুজোয়। যে সমস্ত পুজো পরিবেশ সংক্রান্ত বার্তা দেবে, তাদের বিশেষ সম্মান জানানো হবে। প্লাস্টিকমুক্ত পরিবেশের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শহরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে বসানো হচ্ছে কমপক্ষে ১৫০টি বায়োটয়লেট। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বায়োটয়লেটের দায়িত্ব নিয়েছে চন্দননগর পুর নিগম। পাঁচটি পয়েন্টে থাকবে মেডিক্যাল ভ্যান ও অ্যাম্বুল্যান্স। নদীপথে দুর্ঘটনা এড়াতে থাকবে স্পিডবোট।
কৃষ্ণনগরে চলছে এখন জগদ্ধাত্রী পুজোর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। পুজো এখানে মূলত একদিনের। বুধবার একদিনেই সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী পুজো করা হয়। তবে একদিনের পুজো হলেও পুজোর আয়োজকদের উৎসাহে কোথাও খামতি নেই। মঙ্গলবারই মণ্ডপ তৈরি শেষ করে দর্শকদের জন্যে অপেক্ষা করবে। চন্দননগরে যেমন আলোকসজ্জা আকর্ষণীয়, তেমনই কৃষ্ণনগরের মণ্ডপসজ্জা হয় দেখার মতো। এই আকর্ষণীয় মণ্ডপসজ্জাই এখানকার জগদ্ধাত্রী পুজোর মূল আকর্ষণ। কোথাও বিভিন্ন মন্দির বা ভবনের আদলে সুউচ্চ মণ্ডপ তৈরি করা হয়। আবার কোথাও বা কোনও প্রসিদ্ধ স্থান বা ঘটনাকে থিম করে মণ্ডপ চত্বর সাজানো হয়।
এবার যেমন রাধানগর অন্নপূর্ণা সরণি বারোয়ারি গঙ্গোত্রী–গোমুখের আদলে তাদের মণ্ডপ সাজিয়েছে। পাত্রবাজারের স্বীকৃতি ক্লাব স্বামীনারায়ণ মন্দিরের আদলে তাদের মণ্ডপ তৈরি করেছে। রায়পাড়া মালিপাড়া বারোয়ারি অন্ধ্রের এক শিবমন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে এক বিরাট শিবলিঙ্গ। রবিবারই এই পুজোর উদ্বোধন হয়ে গেছে। ঘূর্ণী বারোয়ারি পদ্মনাভ মন্দিরের আদলে তাদের মণ্ডপ করছে। ভাই ভাই সঙ্ঘ আবার অক্ষরধাম মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করছে। ঘূর্ণীর স্মৃতি সঙ্ঘের থিম এবার জল ও জীবন।
পিছিয়ে নেই কলকাতাও। শ্যামবাজার, বাগবাজারে তো বটেই শহরতলিতেও বেড়েছে জগদ্ধাত্রী পুজো। বাড়ির পুজো তো রয়েছেই, তার সঙ্গে রয়েছে বারোয়ারি পুজোও। মহাসমারোহে রীতি মেনে পুজো, খাওয়া দাওয়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জমজমাট আয়োজন। কিছু পুজোর উদ্বোধন হল সোমবার। কয়েকটির উদ্বোধন হয়েছে আগেই। জগদ্ধাত্রী ঠাকুর দেখতে দর্শকরা ভিড় জমাচ্ছেন পুজোমণ্ডপে। ৫২ বছরে পা রাখল বাগবাজার সার্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজো। সোমবার সন্ধেয় উদ্বোধন হল পুজোর। চারদিন ধরে চলবে নানান অনুষ্ঠান। আজ, মঙ্গলবার বিকেল থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মাতবে মণ্ডপ চত্বর। বুধবার আয়োজন করা হয়েছে প্রসাদ বিতরণী অনুষ্ঠান। প্রতিবছরই প্রায় ৭ হাজার মানুষের সমাগম হয় এই অনুষ্ঠানে। খিচুড়ি, পোলাও, নানান মিষ্টি, পায়েস–সহ আরও অনেক কিছু দেওয়া হচ্ছে প্রসাদে। বৃহস্পতিবার বিসর্জনের আগে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেই কাটবে সন্ধে। শুক্রবার হবে প্রতিমা বিসর্জন।
অন্যদিকে ২৫ বছরে পড়েছে মহিষবাথান তরুণ সঙ্ঘের পুজো। শনিবার উদ্বোধন থেকে শুরু হয়ে চলছে নানান অনুষ্ঠান। রবিবার এলাকার শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সোমবার হয়ে গেল আঁকা প্রতিযোগিতা–সহ হরেক রকমের অনুষ্ঠান। এদিকে বেনিয়াটোলা স্ট্রিটে বটকৃষ্ণধামে আয়োজন করা হয়েছে মঙ্গলানুষ্ঠানের। পুজোর বয়স ১২০ বছর। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে এই পুজো শুরু করেন প্রয়াত বটকৃষ্ণ পাল। দেবী দুর্গার আরেক রূপ পদ্মাসীনা দেবী জগদ্ধাত্রী পূজিত হয়ে আসছেন সেই সময় থেকেই। এখানে প্রতিমার মধ্যে বিশেষত্ব দেখা যায়। চার সখী পরিবেষ্টিত হয়ে দেবী সিংহের পিঠে পা মুড়ে ‘বাবু’ হয়ে বসে থাকেন। সনাতন ডাকের সাজেই সাজানো হয় প্রতিমাকে। আগে ঢাকা থেকে শিল্পী এসে প্রতিমা সাজাতেন, এখন অবশ্য কলকাতার শিল্পীই সাজান।