গত কয়েকদিন ধরেই প্রবল বায়ুদূষণের জেরে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে দিল্লীতে। আর তার মধ্যেই এবার রাজধানীতে বেনজির বিক্ষোভে নামলেন দিল্লী পুলিশ। উর্দি পরেই নিজেদের সদর দফতরের সামনে দাবি করলেন বিচার। আইনজীবীদের হাতে পর পর আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাতেই এই প্রতিবাদ। মঙ্গলবার আইটিও এলাকায় কয়েক হাজার পুলিশ কর্মী ঘেরাও করলেন দিল্লী পুলিশের সদর দফতর। বেনজির এই ঘটনার মোকাবিলা করতে, বাইরে বেরিয়ে আসেন দিল্লীর পুলিশ কমিশনার অমূল্য পট্টনায়ক। বাহিনীর বিক্ষোভরত সদস্যদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ করেন। কথা দেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ারও।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই দেখা যায়, দিল্লী পুলিশের সদর দফতরের বাইরে জমায়েত হচ্ছেন উর্দিতে থাকা এবং সাদা পোশাকে থাকা পুলিশ কর্মীরা। গোটা সদর দফতর ঘিরে ফেলেন তাঁরা। তবে কোনও স্লোগান নয়, চিৎকার নয়, শুধু নীরব প্রতিবাদ। হাতে হাতে প্ল্যাকার্ড। সেই প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘আমরা দুঃখিত। আমরা পুলিশ। আমাদের কোনও অস্তিত্ব নেই। আমাদের পরিবার নেই। আমাদের কোনও মানবিক অধিকারও নেই।’ অনেকের হাতে প্ল্যাকার্ড, ‘আমরা বিচার চাই।’
ঘটনার সূত্রপাত ২ নভেম্বর। দিল্লীর তিসহাজারি আদালতের পার্কিং এরিয়ায় এক আইনজীবীর গাড়িতে পুলিশের গাড়ির ধাক্কার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে আদালত এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায়। কমপক্ষে ২০ জন পুলিশ কর্মী আহত হন আইনজীবীদের হামলায়, এমনটাই পুলিশ কর্মীদের অভিযোগ। উত্তেজিত আইনজীবীরা ভাঙচুর চালান একের পর এক পুলিশের গাড়িতে। আগুন পর্যন্ত ধরিয়ে দেন। আইনজীবীদের পাল্টা অভিযোগ, কয়েকজন পুলিশ কর্মী এক নিরস্ত্র আইনজীবীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়, পুলিশের গাড়িতে তুলে ব্যাপক মারধরও করে।
ওই ঘটনার পর থেকেই দিল্লীর অন্যান্য আদালতে কর্মবিরতি শুরু করেন আইনজীবীরা। তার পরে, দিল্লীর সাকেত এবং করকরডুমা আদালতে আইনজীবীদের হাতে পুলিশের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। গতকাল সকালে একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসে, যেখানে দেখা যাচ্ছে— বাইকে সওয়ার এক পুলিশ কর্মীকে রাস্তায় আটকাচ্ছেন আইনজীবীরা। তার পরই শুরু হয় এলোপাথাড়ি মারধর। কোনও মতে বাইক ঘুরিয়ে পালিয়ে যান ওই পুলিশ কর্মী। পুলিশের উপর একই রকম হামলার ঘটনা ঘটে করকরডুমা আদালতেও। দিল্লী পুলিশের নিচুতলার কর্মীদের অভিযোগ, পর পর উর্দির উপর আক্রমণ নেমে আসার পরও কোনও ব্যবস্থা নেননি দিল্লী পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা। অভিযোগ, বাহিনীর সদস্যদের পাশে থাকার পরিবর্তে, নীরব দর্শকই থেকেছে তাঁদের উঁচু তলা।
প্রতিবাদী পুলিশ কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন দিল্লী পুলিশের প্রাক্তন শীর্ষ আধিকারিকদের অনেকেই। দিল্লীর প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার এই ঘটনার পর টুইট করে বলেন, ‘‘বাহিনীর কোনও নেতা নেই। বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে একতা নেই। এক জন সহকর্মী আক্রান্ত হলে বাকিরা তাঁকে বাঁচাতে যাচ্ছেন না।” অবশেষে আজকে পুলিশের বেনজির এই বিক্ষোভে নড়েচড়ে বসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও। তড়িঘড়ি সদর দফতরের বাইরে বেরিয়ে আসেন পুলিশ কমিশনার। তিনি বাহিনীর সদস্যদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ করেন। বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘এটা পুলিশের পরীক্ষার সময়।” আশ্বাস দেন, পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় দোষীরা শাস্তি পাবেন।