দল ভাঙানোর খেলায় মাস্টার্স করে ফেলেছেন মুকুল রায়। স্বাভাবিক ভাবেই চাপ বাড়ছিল বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ওপর। এরপরই মুকুলকে টেক্কা দিতে শোভন ও বৈশাখীকে দলে আনলেন দিলীপ ঘোষ। কিন্তু সেটাই ব্যুমেরাং হয়ে গেল। শোভনকে ধরে রাখতে পারলেন না দিলীপরা। তার জেরে মুখ পুড়েছে বঙ্গ বিজেপির। এমন ঘটনায় যারপরনাই ক্ষুব্ধ দিল্লীর শীর্ষ নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই এই নিয়ে জমা পড়েছে গুচ্ছের নালিশ।
রাজনীতিতে দলের অন্দরে একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন নেতারা। কিন্তু সেই ছাপিয়ে যেতে গিয়েই গোল খেলেন দিলীপ ঘোষ। লোকসভা ভোটের আগে মুকুল রায়ের আনা নিশীথ প্রামাণিক, সৌমিত্র খাঁ, অর্জুন সিংসরা এখন সাংসদ। ঘাটালে হারলেও ভারতী ঘোষ লড়াই ছুঁড়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন এরপরই নিজেদের প্রমাণের তাগিদে শোভনকে তৃণমূল থেকে ভাঙিয়ে আনার পরিকল্পনা করেন জয়প্রকাশ মজুমদার ও দিলীপ ঘোষ। জয়প্রকাশের উদ্যোগে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। এরপরই দিল্লীতে গিয়ে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখান শোভন-বৈশাখী। ওই সাংবাদিক বৈঠকে ডেকে নেওয়া হয় মুকুল রায়কে। কিন্তু শোভনকে দলে আনার নেপথ্যে আগাগোড়া ছিলেন দিলীপ ঘোষ।
কিন্তু শোভন চট্টোপাধ্যায় দলে আসার পর থেকে তাঁকে নিয়ে জেরবার হয়েছে বিজেপি। দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছিল, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় কত দরের নেত্রী যে তাঁকে দিল্লীতে নিয়ে গিয়ে যোগদান করাতে হবে? দিলীপ ঘোষরা তখন শোভনের সাংগঠনিক দক্ষতা ও দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছিলেন। কিন্তু দেবশ্রীকে নিয়ে বেঁকে বসেন শোভনবাবু। দেবশ্রীকে নিলে তাঁর পক্ষে বিজেপি করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন। দিল্লীতে গিয়েও কথা বলে আসেন শোভন-বৈশাখী। কিন্তু রাজ্য সভাপতিও গোঁ ধরে থাকেন, কারও ব্যক্তিগত আপত্তি থাকতেই পারে তবে দল এসবের ঊর্দ্ধে। এরপর দলীয় অনুষ্ঠানেও দেখা যায়নি তাঁদের। অমিত শাহ, জেপি নাড্ডারা রাজ্যে ঘুরে গিয়েছেন। কিন্ত বেপাত্তাই ছিলেন তাঁরা।
এরপরই ভাইফোঁটায় কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে যান শোভন-বৈশাখী। তখনই নিশ্চিত হয়ে যায়, তৃণমূলে যোগদান করতে চলেছেন শোভন। শুক্রবার শোভনকে ওয়াই ক্যাটগরির নিরাপত্তা ফিরিয়ে দেয় রাজ্য সরকার। এখন প্রাক্তন মেয়রের ‘ঘর ওয়াপসি’ সময়ের অপেক্ষে। সব মিলিয়ে শোভনকে নিয়ে হারাকিরিতে মুখ পুড়েছে দলের। তা মোটেই ভালো চোখে দেখছেন না দিল্লীর নেতৃত্ব। দিলীপের হঠকারিতায় নেতারা যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। তবে দলের মুখ পুড়েছে মানতে নারাজ দিলীপ ঘোষ। তাঁর যুক্তি, রাজনীতিতে এমনটা হয়েই থাকে।