গত ৫ আগস্ট সংসদে জম্মু ও কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিল ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে বিল পাশ করিয়ে কাশ্মীর থেকে লাদাখকে বিচ্ছিন্ন করে দু’টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করার ঘোষণা করেন তিনি। তারপর থেকে প্রায় আড়াই মাস ধরে ‘তালাবন্ধ’ পরিস্থিতি ছিল ছিল উপত্যকায়। ছিল না ফোন বা ইন্টারনেট পরিষেবা। বন্ধ ছিল প্রত্যেকটি স্কুল-কলেজ-অফিস। অবশেষে ৩১ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে জম্মু-কাশ্মীর। আর ঠিক তার পরের দিনই কাশ্মীরে সেনার হাতে বেধড়ক মার খেলেন সাংবাদিকেরা। গুরুতর জখম হলেন এক মহিলা-সহ প্রায় এক ডজন সাংবাদিক।
বিক্ষোভের আশঙ্কায় পুরনো শ্রীনগরের কিছু এলাকায় এখনও সাধারণ নাগরিকদের গতিবিধিতে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। তেমনই এক এলাকায় আজ খবর সংগ্রহে গিয়েছিলেন সাংবাদিকেরা। অভিযোগ, তাঁরা যখন ছবি তুলছিলেন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছিলেন, তখনই সেনাবাহিনীর একদল জওয়ান তাঁদের ঘিরে ধরে পেটাতে শুরু করে। মহিলা সাংবাদিক মসম্মত জেহার, আদিল আব্বাস, ইদ্রিস আব্বাস, মজিন মোট্টু-সহ অন্য সাংবাদিকেরা জওয়ানদের মারধরে জখম হন। তবে প্রশাসন এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে। তাদের বক্তব্য, মোটের উপরে শান্তিই রয়েছে উপত্যকায়, বড় কোনও বিক্ষোভ হয়নি।
প্রসঙ্গত, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে শ্রীনগর ও অন্যান্য জেলা সদরে ভোর সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বাজার বসছিল। গতকাল তা-ও বন্ধ। অন্যান্য দোকানপাটও বন্ধ। বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবাও। সরকারি বাস নেই। ট্রেন নেই। শুধু কিছু প্রাইভেট গাড়ি চলছে। তবে জেলা থেকে জেলায় যাতায়াত খুব বেশি নেই। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের ঘোষণার পর থেকে কেটে গিয়েছে প্রায় ৩ মাস। স্থানীয়দের অভিযোগ, গোটা সময়টায় জামিয়া মসজিদে শুক্রবারের প্রার্থনাও করতে দেওয়া হয়নি কাউকে। পবিত্র মাসে এই কড়াকড়িতে ক্ষুণ্ণ তাঁরা। মুক্তি পাননি বন্দী নেতারাও।
যদিও প্রশাসন বলছে, উপত্যকার কোথাও কার্ফু নেই। তবে এক পুলিশকর্তা জানান, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে পুরনো শ্রীনগরের পাঁচটি থানা এবং শৌরার কিছু কিছু এলাকায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে। দশম-দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা চলছে বলে স্কুলগুলোর বাইরে যদিও অভিভাবকদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। উল্লেখ্য, নতুন দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের যে কোনও এলাকায় সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন বা ‘আফস্পা’ প্রয়োগের রাশ আজ নিজের হাতে নিয়েছে কেন্দ্র। আগে এই ক্ষমতা ছিল রাজ্য প্রশাসনের হাতে। এছাড়া, জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভা কেন্দ্রগুলির প্রস্তাবিত পুনর্বিন্যাস স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকই করবে, নির্বাচন কমিশন নয়।