ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলির ইচ্ছেতে ভারতের মাটিতে হতে চলেছে ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচ। ইডেনে আয়োজিত হবে গোলাপি বলের দিন-রাতের টেস্ট ম্যাচ। সিএবি এই ম্যাচ আয়োজনের ভার পেয়ে বেশ খুশি। প্রবল উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে অনুরাগীদের মধ্যে। অনেকেই জানতে চাইছেন, দৈনিক পঞ্চাশ টাকার টিকিট কবে ও কোথা থেকে পওয়া যাবে। টেস্ট ম্যাচ ঘিরে তিলোত্তমার এমন আবেগ সত্যিই বহু বছর দেখা যায়নি।
একই সঙ্গে চাপা উত্তেজনা রয়েছে বঙ্গীয় ক্রিকেট সংস্থার কর্তাদের মধ্যে। বাংলার এক প্রাক্তন ক্রিকেটারের কথায়, ‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে শিশির। ম্যাচ যদি আড়াই-তিন দিনে শেষ হয়ে যায়, তাহলে অনেকে দিন-রাতের টেস্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন।’ আসলে, এখনও অবধি গোটা বিশ্বে যে ১১টি দিন-রাতের টেস্ট হয়েছে, তার অধিকাংশই গ্রীষ্মকালে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে শহর জুড়ে শীতের প্রকোপ ক্রমশ বাড়বে। এখনই সন্ধ্যার পর থেকেই শিশির পড়ছে। ইডেনে দিন-রাতের টেস্ট যখন হবে, তখন তার পরিমাণও বাড়বে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। সেক্ষেত্রে গোলাপি বল খুব তাড়াতাড়ি নরম হয়ে যাবে। বল গ্রিপ করতে সমস্যায় পড়বেন স্পিনাররা। আউটফিল্ড খুব বেশি ভিজে গেলে ফিল্ডিং করতেও সমস্যা হবে।
সব দিক মাথায় রেখে শিশির সমস্যা থেকে ইডেনে ঐতিহাসিক দিন-রাতের টেস্টকে বাঁচাতে ম্যাচের সময় কিছুটা এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিল সিএবি। সচিব অভিষেক ডালমিয়া জানিয়েছেন, ‘ম্যাচটা দুপুর ১টায় শুরু করতে পারলে শিশির তেমন সমস্যা হবে না। সেক্ষেত্রে খেলা রাত আটটায় শেষ হয়ে যাবে। দেখা যাচ্ছে, ইডেনে রাত আটটার পর থেকেই বেশি শিশির পড়ছে। ম্যাচের সময় সম্পর্কে আমরা বিসিসিআই ও ব্রডকাস্টারকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘টিকিটের রং গোলাপি করার পরিকল্পনা রয়েছে। সোনার কয়েনে টস হবে। রুনা লায়লা, ঊষা উত্থুপরা সঙ্গীত পরিবেশন করতে পারেন। অতিথিদের গোলাপি টাই দেওয়া হতে পারে। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশেষ টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া হেলিকপ্টার শো করার সম্ভাবনা রয়েছে।’
বিরাট কোহলির কোকাবুরা গোলাপি বলে আপত্তি তোলাতেই ইডেনে দিন-রাতের টেস্ট ম্যাচটি এসজি বলে খেলা হবে। ইতিমধ্যেই বিসিসিআই ছ’ডজন গোলাপি বলের অর্ডার দিয়েছে। পরের সপ্তাহেই ভারতীয় বোর্ডের হাতে গোলাপি বল তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে এসজি। তবে কোহলি কিন্তু এসজি লাল বলের মান নিয়ে অতীতে বারবার প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাই এসজি গোলাপি বলে খেলার পর তাঁর কী প্রতিক্রিয়া হয়, সেটাই দেখার। তবে এসজি কোম্পানির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, লাল বল আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। গোলাপি বলের মান নিয়ে কোনও আপোস করা হবে না।
সৌরভ গাঙ্গুলি সিএবি সভাপতি হওয়ার পর থেকে ইডেনের বাইশ গজের চরিত্র বদলে গিয়েছে। বসেছে বারমুডা ঘাস। দেশের সেরা গ্রাউন্ডের পুরস্কারও পেয়েছে। ইডেনের কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায় দিন-রাতের টেস্টের পিচের চরিত্র নিয়ে বলছেন, ‘প্রত্যেকটা ম্যাচই আমাদের কাছে নতুন পরীক্ষা। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। সৌরভ গাঙ্গুলি ক্রিকেটটা আমাদের সবার থেকে ভালো বোঝেন। তাই এসজি গোলাপি বলে ভালো টেস্ট উপহার দেওয়ার জন্য উপযুক্ত পিচই তৈরি করা হচ্ছে।’ তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘শিশিরের মাত্রা বাড়ে রাত আটটার পর। সাড়ে পাঁচটায় সন্ধ্যা হচ্ছে। খেলা যদি আটটায়শেষ হয়, তাহলে শিশির নিয়ে চিন্তার তেমন কোনও কারণ নেই। অ্যান্টি ডিউ কেমিকেল স্প্রে করা হবে পিচে। আউট ফিল্ড শুকনো রাখতে মপিং করা হবে।’