কলকাতা ও হাওড়া- এই দুই যমজ শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য বস্তি। সেখানে কিছু জায়গা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। তাই এই দুই শহরের বিভিন্ন বস্তির বাসিন্দাদের জীবন যাত্রার মানোন্নয়নে রাজ্য সরকার তাঁদের প্রজাস্বত্ব সংক্রান্ত নিয়মে বেশ কিছু বদল এনেছে। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, এখন থেকে ঠিকা প্রজাদের ঠিকা লেসি-র মর্যাদা দেওয়া হবে। পাশাপাশি, সরকার এ বার ঠিকা প্রজাদের দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে জমি লিজে দেবে।
সেলামির বিনিময়ে তাঁরা ৩০ থেকে ৯৯ বছর পর্যন্ত জমির লিজ নিতে পারবেন। ঠিকা প্রজার জমিতে থাকা ভাড়াটেদের ‘ঠিকা অ্যাসাইনি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে ভাড়াটেদের। তবে তাঁদের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে আইনি রক্ষাকবচ রাখা হচ্ছে। একই সঙ্গে ঠিকা জমিতেও এখন থেকে ‘বিল্ডিং রুলস’ কার্যকর করা হবে। ফলে বস্তির জমিতেও বহুতল নির্মাণে কোনও বাধা থাকছে না। তবে প্রোমোটাররা ঠিকা লিজে থাকা জমিতে বহুতল বানাতে পারবেন না। ঠিকা প্রজা ও ভাড়াটেদের কোন ভাবেই উৎখাত করা যাবে না বলে এদিন পুরমন্ত্রী জানিয়েছেন। শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রজা ও ভাড়াটে যৌথ যদি বাড়ি সংস্কার বা বহুতল নির্মাণ করতে চান তবে তাঁদের সরকারের কাছে আবেদন জানাতে হবে। সরকার সেই আবেদন বিবেচনা করে অনুমোদন দেবে। প্রয়োজনে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁদের বাড়ি তৈরীর জন্য ঋণ দেয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
রাজ্য ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রের খবর, বর্তমানে কলকাতা পুর এলাকায় দু’হাজার এবং হাওড়া পুর এলাকায় পাঁচশো একর জমিতে ঠিকা প্রজারা বসবাস করছেন। মূলত জমিদারি আমলে টাকার বিনিময়ে কিছু প্রজাকে শহরের জমির ঠিকা স্বত্ত্ব দেওয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার পর সরকার ওই সব জমিকে খাস ঘোষণা করে মালিকানা নিজের হাতে নিয়ে নেয়। এধরণের প্রায় একলক্ষ বেশি প্লটে বসবাসকারী ঠিকা প্রজারা আবার পরবর্তীকালে অনেক ভাড়াটে বসিয়েছিলেন। কলকাতা ও হাওড়ায় মূলত বস্তি এলাকাগুলিই ঠিকা প্রজাদের দখলে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে খবর, জমির মালিকানা সরকারের হাতে থাকায় এত দিন ওই সব জমিতে বহুতল নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। আইন পরিবর্তনের ফলে কলকাতা ও হাওড়ায় প্রায় ২৫০০ একর জমিতে বহুতল নির্মাণের সুযোগ তৈরি হল। পাশাপাশি বাড়ির মালিক ও ভাড়াটেদের মধ্যে বিবাদের জেরে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা জরাজীর্ণ বহুতলগুলিও সংস্কারের রাস্তা খুলে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সামনের বছর কলকাতা পুরনিগমের ভোট। হাওড়া পুরনিগমের বোর্ডের মেয়াদ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। কলকাতার সঙ্গে হাওড়ার পুর ভোটও সরকার একই সঙ্গে করে ফেলতে চায় বলে জল্পনা। কলকাতা পুরসভায় এ বারের লোকসভা ভোটে প্রায় ৫০টি ওয়ার্ডে হেরেছে শাসকদল তৃণমূল। ফলে এখন বস্তিবাসী ঠিকা প্রজাদের হাতে জমির লিজ ঠিকঠাকভাবে তুলে দিতে পারলে আগামী ভোটে সুবিধা হবে বলেই মনে করছে শাসক দলের একাংশ।