বহুদিন ধরেই বাড়িতে কালীপুজো করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি নিজে সারাদিন উপোস রাখেন। ভাইয়ের বউদের সঙ্গে নিয়ে ঠাকুরের ভোগ রান্না করেন। তার পর রাতে অঞ্জলী দিয়ে পুজো শেষ হলে তবেই জল খান। এছাড়া, কালীপুজোর দুপুর থেকেই দলের নেতা মন্ত্রী এবং পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের ভিড় লেগে থাকে দিদি-র বাড়িতে। উঠোনে চেয়ার পেতে জটলা করে খোশ গল্প চলে। সুযোগ পেলে দিদিও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। কে নেতা, কে মন্ত্রী, কে পুলিশ কর্তা তখন বোঝা দায়। তেমনি এবারও রবিবার বিকেল থেকেই মমতার বাড়িতে কালীপুজো উপলক্ষ্যে মানুষ ভিড় করেছিলেন। আলোকসজ্জার সঙ্গেই ছিল স্নিগ্ধ পরিবেশ। ঘুরে ঘুরে অতিথিদের আপ্যায়ন করেন তিনি।
মমতার বাড়ির পুজো শুরু হয় বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ। নিজে উপোস করলেও মহাপুজোর ভোগ রান্নাতেও হাত লাগান তিনি। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ আসেন সস্ত্রীক রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। মমতা প্রথমে তাঁদের নিজের ঘরে নিয়ে যান। সেখানে রাজ্যপাল এবং তাঁর স্ত্রী–র সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন তিনি। তারপর রাজ্যপালকে পুজোর জায়গায় নিয়ে আসেন। প্রতিমা দর্শন করেন রাজ্যপাল। বেশ কিছুক্ষণ সেখানে বসেছিলেন তিনি। সেখানেই দেখা হয় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তাঁকে জড়িয়ে ধরেন ধনকড়। মমতা রাজ্যপালকে উপস্থিত সকলের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন।
এরই মধ্যে সাংসদ তথা মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এসেই রাজ্যপালের পায়ে হাত প্রণাম করেন। অভিষেকের মেয়ে আজানিয়ার সঙ্গেও কথা বললেন রাজ্যপাল। মমতার থাকার ঘর দেখে রাজ্যপাল ধনকড় ‘বিস্মিত এবং অভিভূত’। তিনি ‘অভিভূত’ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সহজ–সরল জীবনযাপন দেখেও। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ রাজভবনে ফেরার জন্য রওনা দেন রাজ্যপাল। এরপর বিকেলে আলিপুরের বৃদ্ধাশ্রম ‘নবনীড়’ থেকে আবাসিকরা এসেছিলেন পুজোয়। নিজের হাতে তাঁদের প্রত্যেককে নাড়ু দেন মমতা। ইন্দ্রনীল সেনের গাওয়া এবং মমতার লেখা গান শোনানো হয় বৃদ্ধাদের।
সন্ধের মুখে পৌঁছন শিবাজী চট্টোপাধ্যায়, অরুন্ধতী হোমচৌধুরি, বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্য সচিব রাজীব সিনহা, রাজ্যপুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র, রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ করপুরকায়স্থ, কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা, প্রাক্তন মুখ্য সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, সোনালি গুহ, ওমপ্রকাশ মিশ্র, সাংসদ দোলা সেন, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, সাধন পাণ্ডে, নির্মল মাজি। সস্ত্রীক এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার গৌতম সান্যালও। তাঁর স্ত্রীকে পুজোর কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। মমতার ভাইদের স্ত্রী লতা, কাজরিরাও ব্যস্ত ছিলেন পুজোর কাজে।
মমতা কখনও ঠাকুরের সামনে গিয়ে বসেন। আবার কখনও বাইরে এসে অতিথিদের সঙ্গে কথা বলেন। শাঁখ, উলুধ্বনির মধ্যে পুজো চলে রাত পর্যন্ত। মমতা বলেন, ‘১৯৭৮ সালে আমাদের পুজো শুরু হয়েছিল।’ সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের জন্য আলাদা জায়গা করা হয়েছিল। পুজোর ফাঁকে তাঁদেরও খোঁজখবর নেন মুখ্যমন্ত্রী। যত সময় বেড়েছে, তত ভিড় বেড়েছে মমতার কালীঘাটের বাড়িতে। ভিড় সামলাতে হিমশিম খেয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। ব্যারিকেডের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অজস্র মানুষের কাছে এগিয়ে গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেউ কেউ তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। কেউ আবার হাত জোড় করে নমস্কার করেছেন।