৮ নভেম্বর, ২০১৬। বছর তিনেক আগের এই একটি দিন, যা আজও প্রায় বেশিরভাগ দেশবাসীর কাছেই দুঃস্বপ্নের মতো। হঠাতই ওদিন সন্ধ্যায় ৭টায় দূরদর্শনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সকলেরই চোখ তখন টেলিভিশনের পর্দায়। তারপরই হল সেই বিশেষ ঘোষণা, রাত বারোটার পর থেকে গোটা দেশে বাতিল পুরোনো পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট। মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ল দেশবাসীর। নোট বাতিলের পক্ষে সেদিন প্রধানমন্ত্রী যে যুক্তি খাড়া করেছিলেন তাদের অন্যতম হল দেশ থেকে কালো টাকা উৎখাত করা এবং জাল নোটের কারবার বন্ধ করা। কিন্তু আদৌ জাল নোট বন্ধ হল কি? না, বরং উল্টোটাই। ‘ক্রাইম ইন ইন্ডিয়া–২০১৭’ শীর্ষক রিপোর্ট বলছে, নোট বাতিলের পর জাল নোট ছাপানোর প্রবণতা বেড়েছে বেশি। উদ্বেগজনকভাবে ৭৬ শতাংশ বেশি। আর জাল নোট ছাপানোতে শীর্ষে রয়েছে স্বয়ং মোদীর গড় গুজরাত।
সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাংক সূত্রে বলা হয়েছিল, বাজার জাল ২০০০ টাকার নোটে ছেয়ে যাওয়ায়, ২০১৯ সালে এখনও পর্যন্ত ২০০০ টাকার নোট ছাপাই হয়নি। এবার ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর এক তথ্যে জানা গেল, নোটবন্দির পরের বছর, ২০১৭ সালে ভারতের বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার হাতে মোট ২৮.১ কোটির জাল নোট ধরা পড়েছিল।
নোট বাতিলের পরের বছরই জাল নোটের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছিল। নোট বাতিলের পর রীতিমতো দ্রুততায় বেড়েছে জালনোট ছাপানোর কারবার। জাল নোটের সিংহভাগই ছিল নতুন চালু হওয়া ২০০০ টাকার নোট। ২০০০ টাকার নোটে উদ্ধার হওয়া জালনোটের পরিমাণ প্রায় ১৪.৯৮ টাকা। জাল নোট ছাপানোর নিরিখে শীর্ষে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ-এর রাজ্য গুজরাতই। শুধু গুজরাত থেকেই ৯ কোটি টাকারও বেশি জাল নোট ছাপা হয়েছিল ২০১৭ সালে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দিল্লি। উদ্ধার হওয়া জাল নোটের পরিমাণ ৬.৭ কোটি। তিনে রয়েছে যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশ।
সব মিলিয়ে ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার ৯৯৪টি জাল নোট উদ্ধার হয়েছে ২০১৭-এ। ২০১৬-এ উদ্ধার হয়েছিল ২ লক্ষ ৮১ হাজার ৮৩৯টি জাল নোট। ‘ক্রাইম ইন ইন্ডিয়া-২০১৭’ রিপোর্ট জানিয়েছে, ২০১৭-এ বাজেয়াপ্ত হওয়া জাল নোটের ৭৪ হাজার ৮৯৮টি ২ হাজার টাকা, ৬৫ হাজার ৭৩১টি ১ হাজার টাকার। এছাড়া, ১ লক্ষ ২ হাজার ৮১৫টি পুরনো ৫০০ টাকা এবং ৮ হাজার ৮৭৯টি নতুন ৫০০ টাকার জাল নোটও ধরা পড়েছে। আর বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৯২ হাজার ৭৭৮টি জাল ১০০ টাকা। ২০১৬–এ নোট বাতিলের ৫৩ দিনের মাথায় ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে বাজারে টাটকা আসা ২ হাজারের ২২২৭টি জাল নোট।