জম্মু কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ করে কেন্দ্রের মোদী সরকারের ধারণা হয়েছিল, আসন্ন ভোটে হয়ত আরও বেশি মানুষের সমর্থন পাবেন। কিন্তু না, ফল হল উলটো। মানুষ ভোট বাক্সে বিজেপির প্রতি তাঁদের ক্ষোভ উগড়ে দিলেন সাধারণ মানুষ। ৩০৭টি আসনের মধ্যে মাত্র ৮১টি আসনে জয়ী পেয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে, ২১৭টি আসনেই জিতেছেন নির্দলরা। ময়দানে ছিল না কোনও প্রধান রাজনৈতিক দল। তাই বিজেপির লক্ষ্য ছিল ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া। কিন্তু না মোদী শিবিরের এই স্বপ্ন সত্যি হতে দেয়নি। নিজেদের ভোটের মাধ্যমেই সকলে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিজেপির প্রতি তারা কতটা বীতশ্রদ্ধ। ভোটে অংশ নেওয়া গ্রাম প্রধানদের বেশির ভাগই জানিয়ে দিয়েছেন, মূলত বিজেপিকে আটকাতেই গত কাল ভোট দিতে বুথে গিয়েছিলেন তাঁরা। দ্বিতীয় কারণ অবশ্যই উপত্যকার উন্নয়ন।
৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পরে এই প্রথম কোনও ভোট হল জম্মু-কাশ্মীরে। গত প্রায় তিন মাস ধরে কার্যত স্তব্ধ উপত্যকা। নেই ইন্টারনেট-টেলিফোন। বন্ধ স্কুল-কলেজ, সিংহ ভাগ অফিস। এমন আবহেও বৃহস্পতিবার ভোট পড়েছে ৯৮ শতাংশেরও বেশি! ব্লক উন্নয়ন পরিষদের এই নির্বাচনে অবশ্য সাধারণ মানুষ ভোট দেন না। শুধু মাত্র পঞ্চ ও সরপঞ্চরাই এখানে ভোট দেন। কাল সাত হাজার প্রতিনিধি ভোট দিয়েছেন। উপত্যকার মানুষ ভোটের মাধ্যমেই বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁরা আর চান না বিজেপিকে।
গোটা রাজ্যে এত কড়াকড়ির মধ্যেও ৯৮ শতাংশের বেশি ভোট পড়ায় প্রশ্ন উঠছে, এত মানুষ আচমকা ভোট দিতে এলেন কেন? বিশেষ করে বিধানসভা বা লোকসভা ভোটে যেখানে কোথাও কোথাও ২০ শতাংশ ভোটও পড়ে না উপত্যকায়। প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন, শ্রীনগরের মতো শহরাঞ্চলে নিষেধাজ্ঞার কড়াকড়ি বেশি থাকলেও গ্রামাঞ্চলে পরিস্থিতি তেমন নয়। গ্রাম প্রধানেরা জানিয়েছেন, বিজেপির মতো দলকে উপত্যকায় ঢুকতে না দেওয়াটাও বেশি ভোট পড়ার অন্যতম কারণ। জম্মু বরাবরই বিজেপির শক্ত ঘাঁটি। কিন্তু সেখানেও ফল তেমন ভাল হয়নি। বেশির ভাগ আসনেই জিতেছেন নির্দল প্রার্থীরা।
প্রতিনিধিদের অন্যতম কুপওয়ারার মুখতার আহমেদ পির বলেন, ‘‘রাস্তা, আলো আর জলের জন্যই তো ভোটটা দেওয়া। আর কাশ্মীর সমস্যার স্থায়ী সমাধানও দরকার। তবে আগে আমার এলাকার স্কুলের ভবনটিকে দোতলা করতে হবে।’’ শ্রীনগরের সরফরাজ বেগের কথায়, ‘‘আমরা সব দিক থেকে হেরে যাচ্ছি। নির্বাচনে লড়েছি কারণ বিজেপিকে সরানোটা দরকার।’’ সোপোরের শাহিদ সাত্তারের নজর মূলত উন্নয়নে। তবে একই সঙ্গে জানালেন, বিজেপিকে গোটা অঞ্চল থেকে দূরে রাখতে চান তাঁরা। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপি কাশ্মীরে নিজেদের জমি শক্ত করতে চাইছে। আমার জেলা বারামুলায় অবশ্য ২৫টা আসন নির্দলরাই পেয়েছেন।’’