পুজোর ছুটির পর ধীরে ধীরে খুলছে সমস্ত সরকারি অফিস। ছুটির পর অফিস খুলতেই পুজো-পরিষেবার হিসেব-নিকেশ নিয়ে বেজায় ব্যস্ত ছিলেন পরিবহন নিগমের কর্তারা। সেই হিসেবেই উঠে এলো এক খুশির তথ্য। দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে বিশেষ যাত্রী পরিষেবা দিয়ে বাড়তি আয় ঘরে তুলেছে বাংলার পরিবহণ নিগম। এই বাড়তি আয়ের অঙ্ক স্বস্তিতে রাখছে কর্তাদের। নিগম সূত্রের খবর, গত কয়েক বছরের মতো এবারও বাস-ট্রাম-ভেসেলে ঘুরিয়ে ঠাকুর দেখানো, প্রতিমা নিরঞ্জনের বিপুল আয়োজন করা হয়েছিল। গত বছরের তুলনায় এবারে পুজো পরিক্রমায় আয় তো বেড়েইছে, তার সঙ্গে বেড়েছে মোট আয়ও।
নিগমকর্তাদের বক্তব্য, সরকারি পরিবহণের উপরে মানুষের আস্থা যে আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে, এই পরিসংখ্যান তার ইঙ্গিত দিচ্ছে। আগামী দিনেও যাত্রী স্বার্থে পরিষেবার মান আরও বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে।
নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের পুজো পরিক্রমায় আয় হয়েছিল ১৭ লক্ষ ৪ হাজার ৬১৫ টাকা। সেই জায়গায় এবার কেবল পুজো পরিক্রমায় নিগমের আয় হয়েছে ১৮ লক্ষ ৬৭ হাজার ৫৪০ টাকা। পুজোর দিনগুলিতে সাধারণ রুটেও নিয়মিত বাস, ভেসেল চালানো হয়েছে। পুজো পরিক্রমা সহ নিয়মিত পরিষেবা মিলিয়ে এবার মোট আয় হয়েছে ১ কোটি ১৮ লক্ষ ৬১ হাজার ৮৯৩ টাকা। গত বছরে মোট আয় হয়েছিল প্রায় এক কোটি টাকা।
বনেদি বাড়ির ঠাকুর দেখানো, ঐতিহ্যবাহী ট্রামে পুজো দর্শন, শহরতলি থেকে বাসে কলকাতার পুজো দর্শন, গ্রামের পুজো পরিক্রমা, এক টিকিটে সারাদিন ঘোরার মতো একাধিক আকর্ষণীয় প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। ছিল গঙ্গায় এবং ইছামতীতে প্রতিমা নিরঞ্জন দেখানোর ব্যবস্থাও। গত কয়েক বছর ধরে গঙ্গায় প্রতিমা নিরঞ্জন দেখানোর আয়োজন করা হতো। এবার তার সঙ্গে নতুন সংযোজন ছিল ইছামতীতে দুই দেশের প্রতিমা নিরঞ্জন দেখানোর প্যাকেজ। প্রতিমা নিরঞ্জনের দু’টি প্যাকেজই এবারে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।
জানা গেছে, পরিবহন নিগমের আয়োজনে গঙ্গাবক্ষে ভেসেলে চড়ে প্রতিমা নিরঞ্জন দেখেছেন প্রায় ৬০ জন। ইছামতীতে প্রতিমা নিরঞ্জন দেখেছেন ৬৭ জন। এছাড়াও, অন্যান্য প্যাকেজের পাশাপাশি হুগলি জেলার বিশিষ্ট বাড়ির পুজো, এক টিকিটে সারাদিন ঘোরার ব্যবস্থাও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। চতুর্থী থেকে নবমী পর্যন্ত নিগমের বাস, ভেসেলের ক্ষেত্রে এক টিকিটে সারাদিন বিভিন্ন সরকারি যানবাহনে ঘোরার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। তার জন্য এলাকাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। এসি ট্রামে পুজো পরিক্রমাও দর্শনার্থীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয় বলে খবর।
আয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে নিগমের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, আসলে সার্বিকভাবে নিগমের পরিষেবার উপরে যাত্রীদের নির্ভরশীলতা আগের তুলনায় অনেকগুণ বেড়ে গিয়েছে। সরকারি পরিষেবা পূর্ববর্তী বছরগুলির থেকে অনেক বেশি ‘স্মার্ট’ হয়েছে। নতুন এসি, নন-এসি বাস, অত্যাধুনিক ট্রাম-ভেসেল পরিষেবায় নেমেছে। পথদিশা অ্যাপ চালু হওয়ায় যাত্রীরা সরকারি বাসের গতিবিধি আগাম জেনে স্টপে এসে দাঁড়াচ্ছেন। এতে সময় বাঁচছে যাত্রীদের। সরকারি পরিবহণের নতুন এই ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই পুজোর দিনগুলিতে পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে যাত্রীদের আস্থা বৃদ্ধিতে আমরা খুশি। এর এই আস্থা বৃদ্ধির ফলে আদতে লাভ হচ্ছে পরিবহন নিগমেরই।