মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর দিনই কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল যে এবার রেলের বেসরকারিকরণ করতে চলেছে মোদী সরকার। তারপরই সমস্ত জল্পনাকে সত্যি করে বাজেট পেশের দিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, রেল এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বেসরকারিকরণের পথেই হাঁটতে চলেছে কেন্দ্র। আর সম্প্রতি নীতি আয়োগের বৈঠকের পর ১৫০ টি ট্রেন ও ৫০টি স্টেশনের ক্ষেত্রে দ্রুত গতিতে ধেয়ে আসছে বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়া। জানা হেছে, বিভিন্ন ট্রেনের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হাতে। আর তাই হচ্ছেও। পূর্ব রেলের অনুসন্ধান বিভাগের দায়িত্ব এবার বেসরকারি সংস্থার হাতে, জারি হল বিজ্ঞপ্তি। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই কর্মীদের মধ্যে দানা বাধছে ক্ষোভ।
সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পূর্ব রেলের তরফে চাওয়া হয়েছে দরপত্র৷ অনুসন্ধান বিভাগকে বেসরকারিকরণের জন্য পূর্ব রেলের তরফে দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তি৷ ডাকা হয়েছে দরপত্র৷ আসানসোল ডিভিশনে স্টেশনের ৯টি স্টেশনের জন্য দরপত্র চাওয়া হয়েছে৷ আগামী দিন কয়েকের মধ্যেই দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে বলে পূর্ব রেল সূত্রে খবর৷ সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়েছে, ‘‘আসানসোল ডিভিশনে ৯টি স্টেশনের ইনকোয়ারি অফিস পরিচালনার জন্য চুক্তি করতে টেন্ডার আহ্বান করছে৷ পূর্ব রেলওয়ে স্টেশনের মুখোমুখি তথ্য প্রদান ভিডিও ভিত্তিক জবাব, স্টেশনে ঘোষণার কাজ টিআইবি ও সিআইবি দ্বারা প্রেরিত তথ্যাদি সম্প্রসারণ এবং তথ্য পরিবেশন করার জন্য বিভিন্ন ডিজিটাল মিডিয়া পরিচালনার কাজে এক বছরের জন্য করতে ইচ্ছুক৷ যোগ্যদের আহ্বান করা হচ্ছে৷’’ সিনিয়ার ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার আসানসোল কর্তৃক দেওয়া এই বিজ্ঞপ্তিতে এই কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷
ইতিমধ্যেই ভারতীয় রেলে বেসরকারিকরণের বিষয়টি নিয়ে গোটা দেশজুড়ে ছড়িয়েছে বিতর্ক৷ ভারতীয় রেল দু’জোড়া ট্রেন আইআরসিটিসি’র হাতে ছেড়ে দিয়েছে৷ এছাড়া ১৫০টির বেশি স্টেশন বেসরকারি সংস্থার হাতে দায়িত্ব ন্যস্ত করেছে রেলমন্ত্রক৷ এই নিয়ে গোটা দেশজুড়ে ছড়িয়ে বিতর্ক৷
উল্লেখ্য, লাভ করাই এখন রেলের মূল লক্ষ্য। পণ্য পরিবহণের লাভ কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে ভাড়ার হার ঠিক করাই ছিল পূর্বতন সরকারগুলির মূল লক্ষ্য। কিন্তু মোদি জমানায় রেলের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার লাভ দেখাটাও রেলের ‘বড় দায়িত্ব’ হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন রেলেরই অনেকে। তাই ১৯৬৯ সালের ৩ মার্চ তৎকালীন রেলমন্ত্রী রাম সুভাগের পরিকল্পিত ভারতীয় রেলের সবচেয়ে ‘গর্বের ধন’ রাজধানী এক্সপ্রেস,১৯৮৮ সালে মাধবরাও সিন্ধিয়ার হাত ধরে চালু হওয়া শতাব্দী এক্সপ্রেস, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বপ্নের দুরন্ত এক্সপ্রেস, লালুপ্রসাদ যাদবের হাত ধরে চালু হওয়া গরিব রথ। একে একে চলে যাবে বেসরকারি হাতে।