‘এক কাপ চা’ দিয়েই বাংলা গানের জগতে আত্মপ্রকাশ ঘটে তাঁর। তিনিই ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু’ গেয়ে জীবনবিমুখ মানুষকে করে তুলেছিলেন জীবনমুখী। তবে তিনি শুধু গানের জগতেরই লোক নয়। একসময় তিনি ছিলেন যাদবপুরের তৃণমূল সাংসদ। এখন নন। কিন্তু আজও তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর অগাধ ভরসার কথা হামেশাই সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেন কবীর সুমন। এবার এনআরসি ইস্যুতেও মমতার সুরে সুর মেলালেন তিনি। এনআরসি নিপাত যাক! এ নিয়েই নতুন গান বাঁধলেন সুমন। তাঁর এই গানের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ার মাত্রই ভাইরাল।
https://www.facebook.com/ekhonkhobor18/videos/2355560008032768/
গানটির যে ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেছেন সুমন, তা গাওয়ার আগে কিছু কথা বলেছেন তিনি। সে কথার প্রতিটি বাক্যে প্রতিবাদ ছিটকে উঠেছে এনআরসির বিরুদ্ধে। সুমন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বৈষ্ণবঘাটার পৈতৃক ভিটেয় বসে এই গানটি মোবাইল ফোনে রেকর্ড করেছেন তিনি। তাঁর বাবা-মা এই বাড়ি তৈরি করেছিলেন। তাঁর দাদু, নারায়ণদাস চট্টোপাধ্যায় এই দেশেরই মানুষ ছিলেন বলে জানেন তিনি। কিন্তু সেই সংক্রান্ত কোনও নথি তাঁর হাতে নেই। তাঁর ঠাকুমাও এই দেশেরই মানুষ ছিলেন বলেই শুনেছেন তিনি। তবে তারও কোনও কাগজ নেই তাঁর কাছে।
এর পরেই স্পষ্ট উচ্চারণে সুমন জানান, ২০০০ সাল থেকে তিনি কবীর সুমন নামটি গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রের অনুমতি নিয়ে। আইনত এই নামটিই তাঁর পরিচয়। কারও ব্যক্তিগত ক্ষোভ বা অভিমানে কিছু করার নেই তাঁর। তবে আদালতের প্রমাণ আছে। তাঁর ধারালো প্রশ্ন। ‘আমি কে তার প্রমাণ আমার কাছে আছে, কিন্তু আমার বাবা কি আমারই বাবা? তার কোনও ডিএনএ টেস্ট তো হয়নি! সবাই বলেছে উনি আমার বাবা, তাই আমি ওঁকে বাবা বলে জেনেছি। কোনও প্রমাণ নেই। বিজ্ঞানের যুগে সঠিক ভাবে আঙুল দিয়ে নিশ্চিত করা যায় কি, উনিই আমার বাবা বলে?’
তীব্র শ্লেষ ছিল সুমনের সে প্রশ্নে। তিনি ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন, নিজেরই জন্ম-ইতিহাসের দিকে। যে সমস্ত শংসাপত্রের ভিত্তিতে এনআরসি করা হচ্ছে, বহু মানুষকে ভূমিহীন করা হচ্ছে, তা যে আদতে কতটা যুক্তিযুক্ত, সে দিকেই আঙুল তুলতে চেয়েছেন সুমন। ভিডিওয় এর পরেই সুমন বলেন, এনআরসি নিয়ে নতুন গান বেঁধেছেন তিনি। তবে সদ্য বাঁধা সে গান খাতা দেখে গাইতে হবে তাঁকে। উল্লেখ করেন ভিয়েতনামের যুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রতিবাদে রোজ একটি করে গান লিখতেন শিল্পী ফিলক্স। রোজ সেই গান রেকর্ডও করতেন ফিলক্স।
সুমন জানান, তিনি অতটা না পারলেও, চার দিকের পরিস্থিতি দেখে তাঁরও গান লিখতে ইচ্ছে করছে নতুন করে। বাঁচতে ইচ্ছে করছে আবার। এর পরেই সুমনের দাবি তোলেন, ‘এনআরসি নিপাত যাক।’ এবং হারমোনিকা বাজিয়ে গাইতে শুরু করেন, ‘কই ছিলি, কোত্থেকে এলি? আয় খেলি দেশ দেশ খেলি। সীমান্ত কাকে বলে কাঁটাতার বুঝি, আয় খুঁজি দুনিয়াটা খুঁজি। তোর খিদে, ওর খিদে, আমারও একই খিদে– খেতে দাও খাই। সব ভাষা খিদে বোঝে, সবাই খাবার খোঁজে, চাই খেতে চাই।’ যা শুনে ইতিমধ্যেই সুমনের নামে জয়জয়কার দিতে শুরু করেছেন নেটিজেনরা। নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ারও করছেন তাঁর এই গান।