এর আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের করা সমীক্ষায় অপরাধ দমন, অপরাধীদের ধরা, তদন্ত ও আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার নিরিখে দেশের সকল পুলিশ স্টেশনের মধ্যে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিল এ রাজ্যের মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা। সদ্য পেশ হওয়া ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি) ২০১৭ সালের অপরাধের রিপোর্টেও দেখা গেছে, একাধিক বিজেপি শাসিত রাজ্যের তুলনায় অনেকটাই সুরক্ষিত মমতার বাংলা। আর এবার সন্ত্রাস দমনের ক্ষেত্রে আরেক নজির গড়ল রাজ্য। ৩৫৭৯ থেকে ৩৫৭। হিসেব করলে ১০ গুণ। সময়ের ফারাক এক বছর। আর তাতেই এই অবিশ্বাস্য সাফল্য পেয়েছে বাংলা। সোমবার প্রকাশিত এনসিআরবির রিপোর্ট থেকে এই তথ্যও জানা গেছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৬ সালে যেখানে রাজ্যে পাচারের ঘটনা ছিল ৩৫৭৯টি, সেখানে ২০১৭ সালে তা ৩৫৭টি। এর পরেই স্বাভাবিক ভাবে যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে, তা হল কোন যাদুবলে এমন সাফল্য পেল রাজ্য?
সে ক্ষেত্রে প্রথমেই উঠে এসেছে সচেতনতা বৃদ্ধি ও পুলিশের সক্রিয়তার কথা। যেমন বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার রশিদ মুনির খানের কথায়, ‘পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। তাদের গতিবিধির উপর লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রচুর সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান হচ্ছে, যার ফলে মানুষ এখন অনেক বেশি সজাগ। সে জন্য বহু ক্ষেত্রে পাচার প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।’ সমাজকর্মী সঞ্জীব সিংও তিনি মনে করেন, স্বয়ংসিদ্ধার পাশাপাশি পঞ্চায়েত স্তরে ও গ্রামগুলিতে যে ভাবে সরকার ও এনজিও কাজ করছে, তাতে সচেতনতা প্রচুর বেড়েছে। ‘আনসেফ মাইগ্রেশন’ অর্থাৎ কিছু না জানিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রবণতা কমেছে। তাঁর কথায়, ‘এর সঙ্গে রয়েছে রাজ্যের পাচার প্রতিরোধে টাস্ক ফোর্সের ভূমিকা। তারাও পাচার নিয়ে অত্যন্ত ভালো কাজ করছে। সকলে একসঙ্গে লড়াই করাতেই এই সাফল্য এসেছে।’
আর এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘এটা ২০১৬ সালের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত রিপোর্ট। ২০১৬ তেই পাচার রোধে পুলিশ স্বয়ংসিদ্ধা শুরু করেছিল। তার পুরো কার্যকরিতা এই রিপোর্টে নেই। কাজেই পরবর্তী বছরগুলোতে ফল আরও ভালো হওয়া উচিত।’ অর্থাৎ তিনি সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’কেই এগিয়ে রাখছেন। উল্লেখ্য, গত ৩০ জুলাই মানবপাচার বিরোধী দিবস উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করেছিলেন, ‘আজ বিশ্ব মানব পাচার বিরোধী দিবস। বাংলা হলো একমাত্র রাজ্য যেখানে চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ট্রাফিকিং ডিরেক্টরেট ও আ্যন্টি ট্রাফিকিং টাস্ক ফোর্স চালু করা হয়েছে। বাংলার সরকার জেলা ও স্থানীয় স্তরে শিশু পাচার বিরোধী কমিটি চালায়। আমাদের সরকার স্বয়ংসিদ্ধা নামক প্রকল্পও চালায় মানবপাচার ও বাল্যবিবাহ রুখতে।’ প্রত্যেকেই মনে করছেন এই সব ক’টি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করাতে এই সাফল্য এসেছে।