বাজেটের অনুমান ছিল, চলতি অর্থবর্ষে সরকারের রাজস্ব আয় পৌঁছবে ২৪.৬ লক্ষ কোটি টাকায়। অর্থ মন্ত্রকের রাজস্ব সচিব অজয় ভূষণ পাণ্ডে সরকারি ভাবে দাবি করেছেন, এর নড়চড় হবে না। কিন্তু রাজস্ব দফতরের কর্তারা মনে করছেন, বছর শেষে আয় দাঁড়াতে পারে লক্ষ্যের বেশ খানিকটা নীচে। একেই রাজকোষে টাকা নেই। তার ওপর আবার এই লক্ষ্যচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের হাতে সিংহভাগ অর্থ তুলে দিতে গিয়ে কেন্দ্রের ভাঁড়ারের টানাটানি অবস্থা বলে কাঁদুনি গাইছে মোদী সরকার। যা দেখে এই আশঙ্কা দানা বাঁধছে যে, রাজ্যগুলির প্রাপ্য টাকায় ভাগ বসাতে পারে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক।
বিরোধী দল শাসিত রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা মনে করছেন, অর্থ মন্ত্রক পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের ওপর চাপ তৈরি করছে, যাতে কেন্দ্রীয় কর থেকে রাজ্যের প্রাপ্য ভাগ কমিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে ওই খাতে যা আয় হয়, তার ৪২ শতাংশ রাজ্যগুলির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। বাম শাসিত কেরলের অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাক যেমন স্পষ্ট বলছেন, ‘অর্থ মন্ত্রক কমিশনকে জানিয়েছে, এ বছর কর বাবদ আয় বাজেট অনুমানের থেকে ২ লক্ষ কোটি টাকা কম হবে। একে যেন কেন্দ্রীয় করে রাজ্যের ভাগ ৪২ শতাংশ থেকে কমানোর যুক্তি হিসেবে খাড়া করা না হয়।’ আইজ্যাকের যুক্তি, অর্থনীতিতে ঝিমুনির ফলে যদি কেন্দ্রের আয় কমে, একই কারণে রাজ্যের রোজগারও কমবে।
প্রসঙ্গত, এন কে সিংহের নেতৃত্বে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের রিপোর্ট তৈরির কাজ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। খুব শীঘ্রই কমিশন নিজের সুপারিশ জানাবে। তার পরে আগামী বছরের ১ এপ্রিল থেকে এই সুপারিশ মেনে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে বিলি হবে কর হিসেবে সরকারের হাতে আসা অর্থ। সূত্রের খবর, কমিশনের কাছে প্রায় সব রাজ্যই জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় কর থেকে রাজ্যের ভাগ ৪২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হোক। যার মধ্যে আছে বাংলাও। উল্টো দিকে, কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের দাবি, রাজ্যের ভাগ ৪২ শতাংশ থেকে যেন কমিয়ে দেওয়া হয়।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের অবশ্য দাবি, তিনি নিজে অন্তত অর্থ কমিশনের কাছে এমন কোনও আর্জি জানাননি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গের সময় থেকেই কমিশনের কাছে আমলা স্তরে এই অনুরোধ জানানো হচ্ছে। এই দড়ি টানাটানির মধ্যে অর্থ কমিশনের কর্তাদের বক্তব্য, কমিশন স্বাধীন ভাবে বিষয়টির বিচার-বিশ্লেষণ করে নিজের সুপারিশ জানাবে। তারা যেমন অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলেছে, তেমন রাজ্যগুলির বক্তব্যও শুনেছে। তবে ওই কর্তারা মানছেন, প্রায় সব রাজ্যই কেন্দ্রীয় করে তাদের ভাগ বাড়ানোর দাবি তুলেছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিও ব্যতিক্রম নয়।