মোদী সরকারের আর্থিক নীতিরও দিশা নেই বলে মনে করেন তিনি। তাই মোদী জমানায় দেশের অর্থনীতির বেহাল দশা নিয়ে দফায় দফায় উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন। আর নোবেল জয়ের পর তো আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকেই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল বলে মন্তব্য করে সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। যে কারণে ইতিমধ্যেই তাঁকে উদ্দেশ্যে বিরূপ মন্তব্য করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা থেকে শুরু করে রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলও। এ নিয়েই সাংবাদিক বরখা দত্তের প্রশ্নের উত্তরে স্বভাবসিদ্ধ মার্জিত ভঙ্গিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ভাষা এবং শব্দ ব্যবহারে অনেক বেশি সংযত থাকা প্রয়োজন মন্ত্রীদের। মন্তব্য কাজ নিয়ে হওয়া উচিত পেশাদারিত্ব নিয়ে নয়।
প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগেই অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন। তা নিয়ে এখনও উচ্ছ্বাস থিতিয়ে যায়নি অভিজিৎ। ইতিমধ্যেই তাঁর কাজ থেকে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে রাজনৈতিক মহল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁকে নিয়ে চলতে থাকা এই রাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং বিতর্কের রেশটাকে মাথায় রেখেই অভিজিৎ বলেন, ‘মতপার্থক্য থাকতেই পারে। সে নিয়ে সমালোচনাও হয়। তাতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু ভাষা এমন হওয়া উচিত নয় যা একজন মানুষকে অপমান করে।’
উল্লেখ্য, নোবেলপ্রাপ্তির পরে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানালেও তাঁকে ‘বাম-ঘেঁষা’ বলে মন্তব্য করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম আস্থাভাজন, রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। পুণের এক সাংবাদিক বৈঠকে মন্ত্রী বলেছিলেন, অভিজিৎ কংগ্রেসের ‘ন্যায়’ প্রকল্পের গুণগান গেয়েছেন, তাঁর ভাবনাকে খারিজ করে দিয়েছে ভারতের জনতা। রেলমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরেই সমালোচনা শুরু হয় নানা মহলে।
নিজের শো ‘বহেস উইথ বরখা’-তে সাংবাদিক বরখা দত্ত প্রশ্ন করেন দারিদ্রদূরীকরণ, আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নয়ন নিয়ে তাঁর কাজকে যে ভাবে কটাক্ষ করেছেন রেলমন্ত্রী, তাতে ব্যক্তিগতভাবে তাঁর ভাবনা কী? এই প্রশ্নের জবাবে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়ালের মন্তব্যে আমি দুঃখিত। আমার পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আমি নিজেকে একজন সার্জন মনে করি যাঁর কাজ রোগীকে ভালো করা। এর সঙ্গে রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিগত পছন্দের কোনও জায়গা নেই।’
মোদী সরকারের সমালোচনা করার জন্যই কি কটাক্ষ শুনতে হচ্ছে? আগের অভিজিৎ আর বর্তমানের অভিজিতের মনোভাবের মধ্যে ফারাক কতটা? উত্তরে অভিজিৎ বলেন, ‘গুজরাতে নরেন্দ্র মোদীর মুখ্যমন্ত্রীত্বের সময়েও আমরা কাজ করেছি। বাংলা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এবং হরিয়ানা, তামিলনাড়ু ও পাঞ্জাবেও কাজ করেছি। আমার কাজ দুরুহ সমস্যার সমাধান করা। ভুল পরামর্শ দিয়ে বিপথে চালিত করা নয়।’ তিনি এ-ও জানান যে, অতীতে মনমোহন সিংহ সরকারেরও সমালোচনা করেছেন তিনি। ১৯৯৭ সালে পি চিদম্বরম যখন তাঁর বাজেট পেশ করেছিলেন তখনও সেই বাজেটের সমালোচনা করেছিলেন তিনি। তাহলে এখন এত কথা হবে কেন? অভিজিতের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শের চেয়ে দেশের উন্নতি তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।