মোদী সরকারের আর্থিক নীতিরও দিশা নেই বলে মনে করেন তিনি। তাই মোদী জমানায় দেশের অর্থনীতির বেহাল দশা নিয়ে দফায় দফায় উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন। আর নোবেল জয়ের পর তো আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকেই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল বলে মন্তব্য করে সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। যা নিয়ে বিজেপি মহলে চাপান-উতোর তৈরি হয়েছে।
ইতিমধ্যেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা ও সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ যেভাবে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছেন, তা নিয়ে বিস্তর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁদের। নেটিজেনদের নিন্দা জুটেছে দিলীপ-রাহুল তথা গোটা দলের। ফলে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের বড় অংশই ক্ষুব্ধ রাজ্য সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সম্পাদকের ওপর।
তাঁরা বলছেন, রাহুল যেভাবে অভিজিতের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কটাক্ষ করেছেন আর রাহুলের মতো খোলাখুলি না-হলেও রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেভাবে ‘অর্ধেক বাঙালি’ বলে কটাক্ষ করেছেন, তাতে ক্ষতি হয়েছে দলেরই। আর মঙ্গলবার দিল্লীতে যে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অভিজিতের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, এ খবরে আরও অস্বস্তিতে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।
আরএসএস ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা রন্তিদেব সেনগুপ্ত যেমন কোনও রাখঢাক না-করে একটি নিউজ পোর্টালে লিখেছেন, ‘অভিজিতের নোবেল পাওয়ার বিষয় নিয়ে কারও ভিন্নমত থাকতেই পারে। তাই বলে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা ঠিক নয়। এতে বিজেপিরই ক্ষতি হচ্ছে। বাংলার শিক্ষিত সমাজ রেগে যাচ্ছেন। এই ধরনের আলোচনায় নিজেদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার বদলে অপরিণামদর্শী রাজনৈতিক চিন্তাভাবনাই ফুটে উঠছে বেশি।’
এমনকী রন্তিদেব তাঁর নিবন্ধে দিলীপ ঘোষের নাম না করে এমনও লিখেছেন যে, ‘অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি কখনই আধা বাঙালি মনে করি না। বরং তাঁর জীবনচর্চা ও সাংস্কৃতিক বোধ থেকে বুঝতে পারি তিনি একশো শতাংশ খাঁটি বাঙালি। তিনি অন্তত বাঙালি হয়ে হিন্দি উচ্চারণে বাংলাটা বলেন না।’ রাজ্য বিজেপির কোর কমিটির সদস্য শমীক ভট্টাচার্যের ভট্টাচার্যের কথায়, ‘আমি প্রথমে ভারতীয়। তার পর বাঙালি। কোনও নোবেলজয়ীর মেধা বিচার করার মতো ঔদ্ধত্য আমার নেই।’
স্বাভাবিকভাবেই বিজেপির অন্দরেই এমন ভিন্নসুর উঠতে, আরও একবার প্রকাশ্যে চলে এল দলের গোষ্ঠীকোন্দল। তবে এই পরিস্থিতিতেও দলের অন্যান্য নেতাদের মন্তব্যকে একপ্রকার নাকচই করে দিচ্ছেন দিলীপ-রাহুল। দিলীপ যেমন বলছেন, ‘আসলে অর্মত্য সেন ও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় দু’জনের ব্যক্তিগত জীবনেই কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। মানুষের এগুলো চোখে পড়ছে। তা নিয়ে নিয়ে কিছু কথাও উঠছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।’ আর রাহুল সিনহার মতে, ‘কোনও অর্থনীতিবিদ যদি অর্থশাস্ত্রকে রাজনীতির সঙ্গে জুড়ে মন্তব্য করেন, তবে তো প্রতিক্রিয়া হতে বাধ্য।’