শূণ্যে ভ্রমন। হ্যাঁ, নিছক মজা মনে হলেও শূণ্যে ভ্রমন করাই যায়। অরুণাচল প্রদেশের জিরো ভ্যালি। প্রাচীন জনজাতি আপাতানি অধ্যুষিত এই অঞ্চলকে ইউনেসকো ‘ওয়র্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে শর্টলিস্ট করেছে। প্রকৃতি এখানে অকৃপণ, অপরূপা। কলকাতা থেকে ইটানগর পৌঁছে সেখান থেকে শেয়ার জিপে জিরো ১১৫ কিলোমিটার।
জানা গেল, অরুণাচলের এই অঞ্চলে হয় পুজোও। পুজোর মরশুমে প্রকৃতি নিজেকে উজার করে মেলে ধরে এইখানে। বহু বছর আগে কোচবিহার থেকে কয়েকজন ব্যবসায়ী এখানে আসেন। তাঁরাই শুরু করেন পুজো। যেতেই দেখা মিলল, আলো ঝলমলে বিরাট মণ্ডপ। তার বাইরে জিলিপি, বাদাম, নাগরদোলা, বেলুনওয়ালা… জমজমাট মেলা। এখানে সব ধর্মের মানুষই চাঁদা দিয়ে মিলেমিশে এই পুজো করেন।
পাহাড়ের গায়ে গায়ে নিজেদের জন্য অপরূপ এক বাসস্থান তৈরি করেছেন এখানকার মানুষেরা। পাহাড়ের পাদদেশে পাকা ধান, উপরে নীল আকাশ, সাদা মেঘ। অক্টোবরে জিরোতে হারভেস্টিং সেরেমনি দেখার মতো। ধান রোপণ থেকে ধান কাটা, আপাতানিদের কাছে পুরোটাই একটা উৎসব। ধান রোপণের সময় ওই জমিতে মাছ চাষও হয়। এই দ্বৈত পদ্ধতির আবিষ্কারক আপাতানিরাই!
এখানে আপাতানি মহিলাদের একটা অন্য ইতিহাস আছে। আপাতানি মহিলাদের থুতনি ও কপালে উল্কি। নাকের দু’দিকে বড় বড় নাকছাবি। তাঁদের এই সাজের পিছনে আছে ইতিহাস। কয়েকশো বছর আগে সুন্দরী আপাতানিদের অপহরণ করে নিয়ে যেত দস্যুরা। তাই এমন সাজে নিজেদের কুরূপা করে ফেলেন তাঁরা। সেই প্রথাই চলে আসছে। এখন অবশ্য বয়স্কদেরই এই সাজে দেখা যায়। অধিকাংশ আধুনিক আপাতানি মেয়েরা স্বচ্ছন্দ পশ্চিমি ফ্যাশনে। মুখে রুমাল বেঁধে, হাতে গ্লাভস পরে তাঁরা চাষ করেন। ওঁদের মধ্যে অনেকেই বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদে চাকরি করেন।
অরুণাচলের সবচেয়ে বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে এখানেই। প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে হয় জিরো মিউজিক ফেস্টিভ্যাল! পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সঙ্গীতপ্রেমীরা ভিড় করেন তখন। এখানে চুরির ভয় নেই। তাই দরজা খোলা রেখে, সকলে মাঠে চলে যান। এমন অনেক কথার ফাঁকে এল ব্যাম্বু চিকেন ও ঘরে তৈরি রাইস বিয়ার। শুধু ধানে-মাছে নয়, আড্ডার দিক থেকেও এঁরা বাঙালির জাতভাই!
এই অঞ্চলের নাম জিরো পয়েন্ট হবার কারণ, স্যাটালাইট থেকে এই অঞ্চলকে দেখায় পুরো গোল। তাই এই অঞ্চলের নাম জিরো পয়েন্ট৷ তাই পুজোর মরশুমে অরুণাচলের এই অঞ্চলে চোখের বিশ্রামের জন্য আসাই যায়৷