সাধারণ মানুষের জন্যে ভালো কাজে নয়, বরং মানুষের ওপর অত্যাচার করার জন্যেই শিরোনামে থাকে গেরুয়া শিবির। এবার আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার করার অভিযোগ উঠল বিজেপির বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থল কালনা।
সূত্রের খবর, গ্রামেরই ধনী বাসিন্দা বিজেপি নেতা রবিলাল টুডুর নেতৃত্বে এই সমস্ত কীর্তিকলাপ চলছে। হতদরিদ্র পরিবারগুলির ওপরে নির্মম ভাবে নিপীড়ন চলছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পানীয় জল। এমনকী, পুকুরের জল ব্যবহার না করার ফতোয়াও জারি হয়েছে। কালনার সেনেরডাঙার কাছে গোয়ারা–নোয়ারা গ্রামের এই ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছেনআদিবাসী সম্প্রদায়ের সাধারণ বাসিন্দারা।
জানা গেছে, গোয়ারা–নোয়ারা গ্রামটি আদিবাসী অধ্যুষিত। গ্রামের মাঝে একটা বড় পুকুর রয়েছে। সেই পুকুরের পাড়ে দীর্ঘদিন ধরে কয়েকটি আদিবাসী পরিবার বাস করে। পরিবারগুলি খুবই দরিদ্র। পরিবারগুলির সদস্যরা পরের জমিতে খেটে, এখানে–সেখানে কাজ করে কোনও রকমে দিন গুজরান করেন। পুকুর পাড়ে বসবাসের কারণে রান্নাবান্না, বাসন ধোয়া–সহ সংসারের নিত্য প্রয়োজনে পুকুরের জল ব্যবহার করেন।
সম্প্রতি রবিলাল টুডু নামে গ্রামের ওই সম্পন্ন বাসিন্দা পুকুরটি কেনেন। অভিযোগ, এর পরই ওই পুকুরের জল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এর ফলে খুবই বেকায়দায় পড়ে গিয়েছে পরিবারগুলি। নাগালের মধ্যে জলাশয় না থাকায় সমস্যা বেড়েছে। বাবলু হঁাসদা নামে এলাকার বাসিন্দার কথায়, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে ওই পুকুরের জল ব্যবহার করছি। এখন আমাদের পুকুরের জল ব্যবহার করতে না দিলে আমরা কোথায় যাব? এমনকী, পাড়ায় পানীয় জলের টিউবওয়েলটিও ব্যবহার করতে মানা করছেন। আমরা তাই বিক্ষোভ দেখিয়েছি। আমরা সবাই ভূমিহীন। আমাদের মাথা গোঁজার জমিটুকুও কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে। বিহিত চেয়ে তাই আমরা পুলিশ–প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি।’
ঘটনার প্রতিবাদে মুখর হয়েছে আদিবাসী সংগ্রাম কমিটি। কমিটির তরফে বাবলু হাঁসদা বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে এই গ্রামের গরিব পরিবারগুলির ওপর নানা রকম ফতোয়া জারি করেছে। একঘরে করে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদে কালনা–বঁইচি রাস্তা অবরোধ করেছি। অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছি। পুলিশ এসে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু ব্যবস্থা না নিলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’ তবে অভিযুক্ত রবিলাল টুডু সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ তোলা হচ্ছে বলে দাবি করেন।
এলাকার তৃণমূল নেতা তথা সংশ্লিষ্ট কালনা ২ নং ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রণব রায় বলেন, ‘বিক্ষোভ প্রদর্শন, পুলিশ–প্রশাসনের কাছে দরবার–সহ যা কিছু করছেন, এলাকার গরিব আদিবাসীরাই সব করছেন। আমরা তো রাজনৈতিকভাবে এ ব্যাপারে কোনও কর্মসূচি নিইনি। তবে গরিব আদিবাসীদের অভিযোগ সঠিক। আমরা তাঁদের পাশে আছি।’