ভালো নেই উপত্যকা। এই টালমাটাল সময়ে অশান্তির আবহে ভালো নেই কাশ্মীরবাসী। প্রায় শিকেয় উঠেছে পর্যটক ব্যবসা৷ কাশ্মীরের অন্যতম ট্যুরিস্ট স্পট গুলমার্গ। গোটা গুলমার্গ এলাকার মানুষই নির্ভর করে থাকেন গুলমার্গে বেড়াতে আসা পর্যটকদের উপরে। হাতে বোনা সোয়েটার নিয়ে পসরা সাজান বহু মানুষ। আছে খাওয়ার দোকান, চায়ের দোকান। আছেন বেশ কয়েকজন ঘোড়াওয়ালা, যাঁরা পর্যটকদের ঘোরান গুলমার্গ জুড়ে। মোটা চাকার ছোট ছোট গাড়ি চলে, পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার জন্য।
লালচক বাজারে চায়ের দোকানি ইকবাল জানান, পর্যটকহীন সুনসান কাশ্মীরে সেই দোকান খোলেনি আড়াই মাস। ফলে বাধ্য হয়ে চায়ের দোকান শুরু করেছেন তিনি। তা-ও চলছেই না প্রায়। স্থানীয় ক’টা মানুষ আর স্থানীয় বাসিন্দার দোকানে এসে চা খাবেন! ইকবালের গলাতেও সেই একই হতাশার স্বর, “আর কত দিন এমন যোগাযোগহীন থাকব আমরা! কত দিন পেটে কিল মেরে রাখব! শীতকাল এসে গেলে তো…”
পাহাড়ি যাপনে শীতকালের ভূমিকা অপরিসীম। শীতে তিন-চারটে মাস বাধ্য হয়ে ঘরে বন্দি থাকতে হয় তাঁদের। বরফে, ঠান্ডায় স্বাভাবিক ভাবে চলে না কাজকর্ম। তাই সেই সময়টার জন্য আগেভাগেই রসদ জমিয়ে রাখেন তাঁরা। খাবারদাবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, জ্বালানি– সবই জমিয়ে রাখতে হয় পর্যাপ্ত পরিমাণে। কাশ্মীর একা নয়, সিকিম, লাদাখ, হিমাচল, অরুণাচল– সব জায়গাতেই এটাই নিয়ম। সেই শীতের রসদ জমানোর একমাত্র সময় বর্ষা পরবর্তী এই পর্যটন ঋতু। অগস্ট থেকে অক্টোবর, ভরে থাকে উপত্যকা। মানুষের রোজগার বাড়ে, ঘরে-ঘরে রসদ বাড়ে। আর কাশ্মীর ঠিক সেই সময়টা জুড়েই ফাঁকা হয়ে রয়ে গেল। অবরুদ্ধ যোগাযোগ, অবরুদ্ধ রোজগার, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।
শুধু তাই নয়। এই সময়টা কাশ্মীরের আরও একটা ব্যবসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মরশুম। আপেল চাষ। পৃথিবীর নানা প্রান্তে রফতানি হয় কাশ্মীরের আপেল। সেই আপেল চাষ এবং সংগ্রহের সময় এই সেপ্টেম্বর-অক্টোবরই। এখন ঘরে ঘরে আপেল পচছে চাষিদের। রফতানি বন্ধ এত দিন ধরে। যানবাহনের উপর অবরোধ ওঠার পরে কিছু পরিমাণ আপেল চালান শুরু হলেও, ইন্টারনেট ছাড়া বড় স্তরের ব্যবসা কার্যত অসম্ভব।
বড় বড় নেতাদের রাজনৈতিক দরবারে কী হয়, কেন হয়, আমরা জানি না। আমরা শুধু এটা জানি, খেটে খাওয়া মানুষদের জীবন কোনও দিন ভাল ছিল না, কোনও দিন ভাল হবেও না।