দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মাসখানেক আগেই প্রকাশিত হয়েছে আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা। যা থেকে বাদ গিয়েছে ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের নাম। যে কোনও মুহূর্তে ভিটেমাটি ছাড়তে হতে পারে তাঁদের। তবে এই ১৯ লক্ষের তালিকায় অধিকাংশই যে বাঙালি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এনআরসি প্রক্রিয়া শুরুর আগে থেকেই মৃত্যু মিছিল চলছে আসামের বিদেশি বন্দীশালায়। সেখানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬। এর মধ্যে ২৪ জনই মারা গিয়েছেন রাজ্যে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠার পরই। মৃতদের মধ্যে ১২ জন হিন্দু বাঙালি। সবক্ষেত্রেই বলা হয়েছে মৃত্যুর কারণ অসুস্থতা।
মানবাধিকার কর্মীদের দাবি, সাধারণ মানুষকে বিদেশি বানিয়ে খুন করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করা উচিত বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মী সাধন পুরকায়স্থ। নিহতদের মধ্যে ৪৫ দিনের শিশু থেকে শুরু করে ৮৬ বছরের বৃদ্ধও রয়েছেন। এঁদের বন্দী করা হয়েছিল এনআরসি তালিকা প্রকাশের আগে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মৃত্যুর মিছিল এবার দীর্ঘতর হবে। বন্দীশালায় মৃতদের একজন নজরুল ইসলাম। বয়স মাত্র ৪৫ দিন। বাড়ি ধুবড়ি জেলার রৌয়ায়। মা সাহিদা বিবির সঙ্গে সেও হয়ে যায় ‘বিদেশি’। এরকমই বন্দীশালায় মৃতদের তালিকায় আছেন সুন্দরমণি রায় (৭৫), নগেন দাস, সুব্রত দে (৩৭), খোকন মণ্ডল (৬৮), শশীমোহন সরকার (৮৫), অমৃত দাস (৬৭), বাসুদেব বিশ্বাস (৫৫), পুনা মুন্ডা (৬৫), ভুলু সদাকর (৬৮), প্রভা রায় (৭০), সন্তোষ বিশ্বাস (৭৫)–রা। সর্বশেষ সংযোজন দুলালচন্দ্র পাল (৬৪)।
২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজ্যে বিজেপির গত তিন বছরের শাসনকালে। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ‘কারারক্ষীদের জুলুম’, ‘খুন’ ও ‘রহস্য’–এর অভিযোগ উঠেছে। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল ‘বিদেশি’ তকমা দিয়ে দেওয়ার পর এঁদের রাজ্যের ৬টি জেলখানার ভিতর অবস্থিত বিদেশি বন্দীশালায় নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু মৃত্যুর পর প্রতিটি ক্ষেত্রেই মরদেহ তুলে দেওয়া হয় ‘ভারতীয়’ পরিবারের হাতে! তবে দুলাল পালের পরিবারের মতো কেউ কেউ তাই মরদেহ নিতে অস্বীকারও করেন। রাজ্যের ৬টি ডিটেনশন ক্যাম্পের মধ্যে বন্দীমৃত্যুর নিরিখে শীর্ষে তেজপুর ও গোয়ালপাড়া। দুটি বন্দীশালাতেই ১০ জন করে আবাসিকের মৃত্যু হয়েছে। শিলচর বন্দীশালায় মৃতের সংখ্যা ৩। ২ জন কোকরাঝাড়ে এবং ১ জন জোরহাট বন্দীশালায় মারা গিয়েছেন।