ক্ষমতায় এসেই শিল্পের পাশাপাশি রাজ্যের কৃষিক্ষেত্রের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সরকারের আমলে এখন একাধিক প্রকল্পের সুফল ভোগ করছেন বাংলার কৃষকরা। যার ফলে তাঁদের গড় বার্ষিক আয় এখন দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন লক্ষ টাকায়। এবার কৃষকদের মুখের হাসি আরও চওড়া করবে ফের এক অভিনব পদক্ষেপ নিল মমতার সরকার। কৃষি বিকাশের লক্ষ্যে চাষিদের নিয়ে তৈরি হচ্ছে পৃথক কোম্পানি। তার মাধ্যমে রাজ্যে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো এবং দরিদ্র চাষিদের বাড়তি অর্থ রোজগারের ব্যবস্থা করছে রাজ্য।
সরকারি কর্তাদের দাবি, এই পরিকল্পনা সঠিক ভাবে বাস্তবায়িত হলে রাজ্যে কৃষি উৎপাদন বাড়বে। ফসলের অভাবী বিক্রি রোখা যাবে। কৃষকদের আয় বাড়লে জীবনযাপনের মান উন্নত হবে। তার প্রভাবে রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতি দৃঢ়তর হবে। রাজ্য কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চাষের উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের নিয়ে ব্লকে ব্লকে ‘ফার্মার্স প্রডিউসার কোম্পানি’ গঠন করা হচ্ছে। যার কেতাবি নাম কৃষক উৎপাদক সঙ্ঘ গঠন প্রকল্প। কেন্দ্রীয় সরকারের কোম্পানি আইনে গঠিত এই সংস্থার মাধ্যমেই কৃষির চিরাচরিত সমস্যাগুলির নিরসন করতে চাইছে সরকার।
রাজ্যের মুখ্য কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ‘আমাদের দেশের সাধারণ কৃষকরা অসংগঠিত। তাই তাঁরা কৃষিতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে পারেন না। কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারেও তাঁরা পিছিয়ে। তাঁদের অনেকে সঠিক মানের বীজ, সার, কীটনাশক প্রয়োগ করতে পারেন না। অভাবী বিক্রির জন্য ফসলের ন্যায্য দামও পান না। তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই ফার্মার্স প্রডিউসার অর্গানাইজেশন (এফপিও) বা ফার্মার্স প্রডিউসার কোম্পানি (এফপিসি) গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
তিনি জানিয়েছেন, ‘ব্যাঙ্ক ঋণ ছাড়াও সরকার থেকে তাঁদের বিভিন্ন ধরনের আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে। এর ফলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আরও সুসংহত ভাবে তাঁরা কৃষি উৎপাদন করতে পারবেন।’ বর্ধমান, উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, মেদিনীপুর, উত্তর চব্বিশ পরগনা, বীরভূম, হুগলি-সহ বিভিন্ন জেলায় কৃষকদের নিয়ে এ ধরনের কোম্পানি গঠন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্য কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপবাবু।
কৃষি দফতরের খবর অনুযায়ী, যে কৃষকরা ওই কোম্পানিতে নাম নথিভুক্ত করতে চান, তাঁদের অংশীদারিত্ব মূল্য ন্যূনতম এক হাজার টাকা এবং রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ৫০ টাকা জমা দিতে হবে। এ রকম ১০ থেকে ১২ জন কৃষককে নিয়ে কৃষক দল তথা এফআইজি তৈরি করা হচ্ছে। একটি কৃষক দলে একটি পরিবার থেকে একজন কৃষক সদস্য অংশ নিতে পারবেন। একটি গ্রামে একাধিক কৃষক দল থাকতে পারে। সমস্ত কৃষক মিলে সিদ্ধান্ত নেবেন দলের নাম কী হবে, দলের তিনজন পদাধিকারী তথা সভাপতি, সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ কে হবেন।
দলের তহবিল তৈরির জন্য স্থানীয় ব্যাঙ্কে একটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। কৃষক দলের প্রথম সভাতেই ঠিক করে নিতে হবে, প্রত্যেক সদস্য প্রতি মাসে কত টাকা করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দেবেন। এরপর প্রতিটি কৃষক দল থেকে দু’জন করে সদস্য নিয়ে ব্লক ভিত্তিক ক্লাস্টার কমিটি গঠন করতে হবে। সেখানেও একজন সভাপতি, সম্পাদক এবং কোষাধ্যক্ষ থাকবেন। ক্লাস্টার কমিটির নিজস্ব ব্যাঙ্ক সেভিংস অ্যাকাউন্ট থাকবে। প্রতিটি ক্লাস্টার কমিটি থেকে ১১ থেকে ১৫ জন কৃষককে নিয়ে কেন্দ্রীয় কোম্পানি আইন অনুসারে ফার্মার্স প্রডিউসার কোম্পানি গঠন করা হবে এবং সেটিকে রেজিস্ট্রেশন করানো হবে।