অর্থনীতিতে ফের নোবেল এসেছে বাঙালির ঘরে। সোমবার দুপুরেই নোবেল কমিটি ঘোষণা করে বঙ্গসন্তান অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। তবে তাঁর পাশাপাশি নোবেল পেয়েছেন তাঁর স্ত্রী এস্থার ডাফলোও। তবে মজার বিষয় হল, এক সময় তিনি হতে চেয়েছিলেন ইতিহাসবিদ। কিন্তু বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য, শিশুমৃত্যু, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের অবনতি তাঁকে মুচড়ে দিত, টানতও একই সঙ্গে। তাই অর্থনীতিকে পথ করে শুরু হয় এস্থার ডাফলোর জার্নি। হাত ধরেন অধ্যাপক-গবেষক, সহকর্মী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এবার তাঁর হাত ধরেই বিশ্বে দারিদ্র্য দূরীকরণ নিয়ে এল নোবেল। শুধু তাই নয়। ডাফলোই হলেন অর্থনীতিতে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নোবেল প্রাপক। এবং অর্থনীতিতে একই সঙ্গে একই বছর স্বামী-স্ত্রী যুগ্মভাবে নোবেল প্রাপ্তিও এই প্রথম। ১৯০৩ সালে পদার্থবিদ্যায় তেজস্ক্রিয়তার উপর গবেষণায় স্বামী পিয়ের কুরির সঙ্গে নোবেল পেয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী মেরি কুরি।
প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালে প্যারিসে জন্ম ডাফলোর। বাবা মাইকেল ডাফলো অঙ্কের অধ্যাপক। মা ডাক্তার। ছোট থেকেই ইতিহাসের নানা বিষয় টানত তাঁকে। চেয়েছিলেন ইতিহাসবিদ হবেন। ইউনিভার্সিটিতে তাঁর বিষয়ও ছিল ইতিহাস। ১৯৯৩ সালে মস্কোতে দশ মাস থেকে তিনি অধ্যাপনা করেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাস, রাজনীতি নিয়ে চর্চা শুরু হয়। একই সঙ্গে তাঁর আকর্ষণের বিষয় হয়ে ওঠে অর্থনীতি। ইউনিভার্সিটি থেকে একই সঙ্গে ইতিহাস ও অর্থনীতি নিয়ে ডিগ্রি লাভ করেন ডাফলো। ১৯৯৯ সালে ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা শেষ করেন। রিসার্চ স্কলার থাকার সময়েই তাঁর পছন্দের অধ্যাপক ছিলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জোসুয়া অ্যাঙ্গরিস্ট। অভিজিতের তত্ত্বাবধানেই বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন ডাফলো। এমআইটিতেই অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। শিক্ষকতা ও গবেষণা পাশাপাশি, সমান্তরালভাবে চলতে থাকে।
মাইক্রো-ইকনমিক্স নিয়েই মূলত গবেষণা ডাফলোর। উন্নয়নশীল দেশগুলির আর্থ-সামাজিক অবস্থাও তাঁর গবেষণাপত্রের অন্যতম বিষয়। যার মধ্যে রয়েছে গার্হস্থ্য সমস্যা, শিক্ষা, অর্থনৈতিক অবস্থা, স্বাস্থ্য-সহ অনেক কিছু। ২০০৩ সালে এমআইটিতেই ‘পোভার্টি অ্যাকশন ল্যাব’ তৈরি করেছিলেন তিনি। তারপর স্যর, বন্ধু, সহকর্মী অভিজিতের সঙ্গে এই ল্যাবেই অর্থনীতির নানা বিষয় নিয়ে অন্তত ২০০টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন তিনি। আর সেসময়ই পেশা এবং গবেষণা ছাপিয়ে সম্পর্কের গভীরতা আরও গাঢ় হয়। একসঙ্গে জীবনের পথে চলার সিদ্ধান্ত নেন ডাফলো-অভিজিৎ। ২০১০ সালে পান কম বয়সে অর্থনীতিতে অন্যরকম ভাবনা ও পথপ্রদর্শনের জন্য ‘জন বেটস ক্লার্ক মেডেল’। ওই বছর ইউনিভার্সিটি অব ক্যাথলিক দে লাওভেন থেকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রিও পান ডাফলো। ২০১৪ সালে তাঁর প্রাপ্তির ঝুলিতে ঢুকে পড়ে সমাজ বিজ্ঞান এবং অর্থনীতিতে ইনফোসিস পুরষ্কারও।
জীবনের যে কোনও পর্যায়েই শক্ত খুঁটির মতো পাশে ছিলেন স্বামী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০৮ সালে বিশ্বের ১০০ জন মেধাবী মানুষের মধ্যে সামনের সারিতেই এস্থার ডাফলোর নাম লেখে আমেরিকার ম্যাগাজিন ‘ফরেন পলিসি’। ‘দ্য ইকোনমিস্ট’-এর তালিকায় বিশ্বের সেরা আট অর্থনীতিবিদের মধ্যে নাম ওঠে তাঁর। ২০১১ সালে ‘টাইম ম্যাগাজিন’-এর প্রকাশিত বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ জন ব্যক্তির তালিকাতেও প্রথম সারিতেই দেখা যায় ডাফলোর নাম। ২০০৬ সালে তাঁর লেখা প্রথম বই ‘এডুকেশন অ্যান্ড এইচআইভি/এইডস প্রিভেনশন: এভিডেন্স ফ্রম আ র্যান্ডোমাইজড এভলিউশন ইন ওয়েস্টার্ন কেনিয়া’ বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। আর ২০১১ সালে স্বামী অভিজিতের সঙ্গে লেখা ‘পুওর ইকনমিক্স: রিথিংকিং পোভার্টি অ্যান্ড দ্য ওয়েস টু এন্ড ইট’ বইটি প্রায় গোটা বিশ্বেই সাড়া ফেলে দিয়েছিল। ২০১২ সালে এই বইয়ের জন্যই ‘জেরাল্ড লোয়েব অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন ডাফল এবং অভিজিৎ।