ভারতীয় ক্রিকেটের এক টালমাটাল পরিস্থিতিতে দেশের ক্যাপ্টেন হয়ে হাল ধরেছিলেন ড্রেসিংরুমের। এ বার প্রশাসক হিসেবে আরও একবার ভীষণ কঠিন পরীক্ষায় নামছেন তিনি। প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তাঁর প্রথম কাজ, স্বার্থের সঙ্ঘাতের মোকাবিলা, পুরোদস্তুর রাজনীতিতে নামার জল্পনা সহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কিত একের পর এক বাউন্সার দিনভর সামলাতে হয়েছে বাংলার মহারাজকে। কিন্তু নিজের শহর কলকাতায় ফিরেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, সবকিছুর আগে তাঁর লক্ষ্য থাকবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে।
মঙ্গলবার দমদম বিমানবন্দরে নামতেই তাঁকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন অনুরাগীরা। এদিন তাঁর জন্যে বিমানবন্দরে ভিড় হয়েছিল বেশ। রাজকীয় অভ্যর্থনার ব্যবস্থা করেছিল সিএবি-ও। এদিন রাজনৈতিক বিষয়ে মুখই খুলতে চাননি সৌরভ। বরং বলেছেন, ‘যে দল নিয়ে কাজ করব, তা তারুণ্যে ভরপুর। এমন টিম নিয়ে কাজ করতে সুবিধে হবে। আশা করি ভালো কাজ করব।’
ব্রিজেশ প্যাটেলকে শেষ মুহূর্তে সরিয়ে যে ভাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে উঠে এসেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, তাতে একটা প্রশ্ন উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অলিন্দে। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁকেই কি প্রধান মুখ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ? সে জন্যই কি বিজেপির এক শীর্ষস্থানীয় নেতার শেষ মুহূর্তের ফোনে সব অঙ্ক পাল্টে যায়? সৌরভ যদিও এমন জল্পনাকে ‘বাপি বাড়ি যা’ ভঙ্গিতে স্রেফ গ্যালারিতে পাঠিয়েছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, ‘এমন কিছু একেবারেই নয়। কেউ এ নিয়ে আমাকে কিছু বলেনি।’ অর্থাৎ, তাঁর কথা থেকেই স্পষ্ট, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে যে দাবি করা হচ্ছিল নানা মহলে, সেই তত্ত্বকে উড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের দিকে শুরুতেই নজর দিতে চান সৌরভ। সৌরভ বলেছেন, ‘এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই, গত ক’বছরে বোর্ডের ভাবমূর্তি অত্যাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এই সময়ে প্রেসিডেন্ট হতে পারায় খুশি। কিছু কাজ করার জন্য দারুণ সুযোগ পেয়েছি। কারণ, ভারতীয় বোর্ড বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সংস্থা। ভারত হল ক্রিকেটের পাওয়ারহাউস। এই দায়িত্ব তাই রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং।’
একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমি রবিবার রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত জানতাম না, আমার নাম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করা হতে চলেছে। আমি যখন ২০০০ সালে প্রথমবার অধিনায়ক হই, তখনও নানা সমস্যা ছিল দেশের ক্রিকেটে। বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতি যে সহজভাবে সামলাতে পারে, তার ওপর বাড়তি দায়িত্বও থাকে। গত তিন বছর দেশের ক্রিকেটে একটা এমার্জেন্সি পরিস্থিতি ছিল। সেটা অনেকটাই হয়তো এখন কেটেছে। আমার প্রথম কাজ হবে, দেশের ক্রিকেট প্রশাসনকে সঠিক পথে নিয়ে আসা। ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনকে স্বাভাবিক করাটা অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।’
লোধা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে অবশ্য এক বছরও পাচ্ছেন না সৌরভ। এর আগে সিএবিতে গত পাঁচ বছর পদাধিকারী ছিলেন তিনি। ফলে ২০২০ সালের জুলাইয়ে ক্রিকেট প্রশাসন থেকে তিন বছরের জন্য কুলিং অফে যেতে হবে তাঁকে। সৌরভ বলছেন, ‘এটাই নিয়ম এবং সেই নিয়ম মানতে হবে। এর মধ্যে আমার প্রথম কাজ হবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের দিকে নজর দেওয়া।’