বহুদিন যাবৎ উৎকণ্ঠা দানা বাঁধছিল আসাম জুড়ে। অবশেষে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মাসখানেক আগেই প্রকাশিত হয়েছে আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা। যা থেকে বাদ গিয়েছে ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের নাম। আপাতত এঁদের প্রত্যেকেরই ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে। প্রত্যেকেই এই মুহূর্তে দেশহীন। অনেকই রয়েছেন, যাঁরা হয়তো ছোটবেলা থেকেই ভারতকে নিজের জন্মভূমি বা দেশ হিসেবে জেনেছেন। তাঁরা এখন নিজভূমে পরবাসী। যে কোনও মুহূর্তে ভিটেমাটি ছাড়তে হতে পারে তাঁদের। এই ১৯ লক্ষের তালিকায় অধিকাংশই যে বাঙালি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এবার তো আসামে ডিটেনশন ক্যাম্পে মৃত্যু হল এক বাঙালি বৃদ্ধের।
প্রসঙ্গত, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের বিচারে ‘বিদেশি’ তকমা জুটেছিল বয়স ৬৪-র দুলাল পালের। ১৯৯৩ সালে ডি–ভোটার বলে ঘোষণা করা হয় আসামের শোণিতপুর জেলার অলিমঙার বাসিন্দা দুলালকে। তারপর ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল তাঁকে বিদেশি বলে ঘোষণা করে। ২০১৭ সালে রাতের অন্ধকারে তাঁকে গ্রেফতার করে ভরা হয় তেজপুর জেলের ভিতর বিদেশি বন্দীশালায়। অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। রবিবার গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। মৃত্যুর পর ক্ষোভে-দুঃখে তাঁর ছেলে মরদেহ নিতে অস্বীকার করেন। হ্যাঁ, তাঁর ছেলে অশোক পালের হাতে মরদেহ তুলে দিতে চেয়েছিল আসাম প্রশাসন। কিন্তু তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘বাবা যখন বাংলাদেশি, তখন বাংলাদেশকেই বুঝিয়ে দেওয়া হোক তাঁর দেহ।’
তাঁর অভিযোগ, ১৯৬৫ সালের নথিপত্র দেখিয়েও তাঁর বাবা নিজেকে ভারতীয় প্রমাণ করতে পারেননি। বৃদ্ধ বয়সে ‘বাংলাদেশি’ হিসাবে বন্দীদশায় কাটাতে হয়। এখন তাঁর দেহ তিনি নেবেন না। সাফকথা, ‘ওদের (ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল) বিচারে বাবা ভারতীয় হয়েও বাংলাদেশি। তাই আমি দেহ নেব না। ওরা বাংলাদেশকেই বুঝিয়ে দিক দেহ।’ এই ঘটনার নিন্দা করেছে বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশনও। ফেডারেশনের নেতা বিপ্লব দাসের অভিযোগ, ভারতীয়দের বিদেশি বানিয়ে এভাবেই ঠেলে দেওয়া হচ্ছে মৃত্যুর দিকে। তবে দুলাল পাল ছাড়াও ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল বিদেশি ঘোষণা করায় আসামে আরও একজন আত্মহত্যা করেছেন।