দুমাস আগে উপত্যকায় নিষিদ্ধ হয়েছিল ৩৭০ ধারা। তারপর ধীরে ধীরে শিথিল হতে থাকে ভূস্বর্গ জারি হওয়া নিষেধাজ্ঞা। পর্যটনে অনুমতি মিলেছে। মোবাইলে রাশ শিথিল হতে চলেছে। প্রশাসন আমজনতাকে অনুরোধ করছে, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোজ জোরগলায় বলছেন, একটা বুলেটও লাগেনি দু’মাসে। কাশ্মীর নিয়ে বিরোধী আশঙ্কা বৃথা প্রমাণ হয়েছে। তবে সরকারের এই ঢাকে ছেদ ঘটাল চার সমাজকর্মীর একটি দল। তাঁরা সম্প্রতি কাশ্মীর এবং জম্মু ঘুরে এসে তাঁদের রিপোর্ট প্রকাশ করলেন শনিবার, সেখানে যে চিত্র উঠে এসেছে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন সরকারি বয়ানের চেয়ে।
প্রসঙ্গত, মনোবিদ অনিরুদ্ধ কালা, জনস্বাস্থ্যকর্মী ব্রিনেল ডিসুজা, সাংবাদিক রেবতী লাউল এবং সমাজকর্মী শবনম হাসমি কাশ্মীরে ছিলেন ২৫-৩০ সেপ্টেম্বর, জম্মুতে ৬-৭ অক্টোবর। তাঁরা কথা বলেছেন, সমাদের সব স্তরের মানুষের সঙ্গে। তার মধ্যে আছেন— রাজনীতিক, আমলা, গৃহবধূ, স্কুলশিক্ষক, ব্যবসায়ী, ফলবিক্রেতা, ট্যাক্সিচালক, ছাত্র, কবি, চাষি, শিশু, সাংবাদিক, সমাজকর্মী, কেটারিং ব্যবসায়ী। আছেন পণ্ডিত, শিখ, খ্রিস্টানরাও। শ্রীনগর থেকে বারামুলা, অনন্তনাগ থেকে বাদগাম এবং জম্মু— সর্বত্র ওঁরা শুনেছেন একই আর্ত প্রতিক্রিয়া।
আজ দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেন শবনম-রেবতীরা। রেবতী সেখানে দাবি করেন, ‘‘কাশ্মীরের থেকেও কম সংখ্যক মানুষ জম্মুতে মুখ খুলেছেন। ওঁদের বাধ্য করা হচ্ছে বলতে, ওঁরা খুশি!’’ শবমনদের রিপোর্ট দাবি করছে, হিংসার প্রকোপ যে দেখা যায়নি, সেটা কাশ্মীরিদের দাঁতে দাঁত চাপা সিদ্ধান্ত। তাঁরা আসলে খুব ভেবেচিন্তেই অহিংস প্রতিবাদের রাস্তায় গিয়েছেন।
বেশির ভাগই তাঁদের বলেছেন, তাঁরা দোকানপাট, অফিস বন্ধ রেখেছেন নিজে থেকেই। দু’তিন জন জানিয়েছেন, দোকান বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে জঙ্গি সংগঠনের সাঁটা পোস্টার তাঁরা দেখেছেন। তার থেকে অনেক বেশি সংখ্যক বলেছেন, কী ভাবে আধাসামরিক বাহিনী বাধ্য করছে ঝাঁপ খোলা রাখতে। তার অবধারিত জবাব, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাশ্মীরিরা দিয়েছেন, সব কিছু বন্ধ করে রেখে।
৩৭০ বাতিল হওয়ার পরে জম্মুতে সকলে উল্লসিত, এ রকম একটা ছবিও সংবাদমাধ্যমের একাংশে তুলে ধরা হয়েছে বারবার। কিন্তু সেটা অনেকটাই সত্য নয় বলেই মনে হয়েছে শবনমদের। জম্মুতে কোনও কড়াকড়ি নেই। গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক, গতিবিধি অবাধ,
মোবাইল কাজ করছে। তবু হোটেলগুলো ফাঁকা। হতাশ এক মালবাহক বললেন, ‘‘কাশ্মীরের যদি একটা চোখ নষ্ট হয়ে থাকে, আমাদের দু’টো চোখই গিয়েছে।’’