গতকাল থেকেই বিসিসিআইয়ের নতুন ক্রিকেট বোর্ড গঠন নিয়ে রুদ্ধশ্বাস নাটক শুরু হয়ে গিয়েছে। যেই নাটক আইপিএল ফাইনালের উত্তেজনাকেও টেক্কা দিতে পারে। বোর্ডের সদর দফতর যতই মুম্বইয়ে হোক, নতুন বোর্ডের মসনদে বসবেন, তা ঠিক করে দেবে নয়াদিল্লী। শনিবার সারা দিন ধরে সেখানেই চলল নানা নাটক আর উথালপাতাল ঢেউ।
এমনই টানটান ‘ম্যাচ’ চলছে যে, বিজেপি হাইকম্যান্ডের হস্তক্ষেপেও শনিবারের রাতের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। বোর্ড নির্বাচনে যে তিরিশটি রাজ্য সংস্থা অংশগ্রহণের ছাড়পত্র পেয়েছে, তাদের প্রতিনিধিদের নিয়ে আজ, রবিবার মুম্বইয়ে বৈঠক। সেখানেই ঠিক হয়ে যাবে নতুন বোর্ডের নতুন রাজা। আর সেই রাজার নাম মুম্বইয়ে গিয়ে চূড়ান্ত হলেও নেপথ্যে সব কিছু ঠিক করে দেবে নয়াদিল্লী। আরও পরিষ্কার করে বললে, রাজধানীতে বসে থাকা বিজেপি হাইকম্যান্ড অমিত শাহ। তারপর ২৩ অক্টোবর মুম্বইয়ে বোর্ডের সভায় সরকারিভাবে সিলমোহর পড়বে।
বাংলার ক্রিকেট ভক্তদের জন্য সুখবর হচ্ছে, নতুন বোর্ডের শীর্ষ কর্তার পদ পাওয়ার দৌড়ে ভীষণ ভাবেই রয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। শনিবার রাজধানীতে বিজেপি হাইকম্যান্ডের সঙ্গে বৈঠকে সশরীরে তো সৌরভ ছিলেনই, রবিবার মুম্বইয়ের বৈঠকেও তিনি খুবই আলোচিত নাম হতে যাচ্ছেন। প্রথম পছন্দ প্রেসিডেন্ট, না হলে অন্তত সচিব— এমন একটা সমীকরণের মধ্যে তিনি শনিবার রাত পর্যন্ত ঘোরাফেরা করছেন।
লোঢা সংস্কার অনুযায়ী, আর মাত্র নয়-দশ মাস মতোই পড়ে আছে সৌরভের হাতে। তার পর তাঁকে চলে যেতে হবে বাধ্যতামূলক তিন বছরের ‘কুলিং অফে’। ঠান্ডা ঘরে যাওয়ার আগে বোর্ডের মসনদে বসার ব্যাপারে প্রবল ভাবেই আগ্রহী তিনি। যদি সত্যিই সৌরভ প্রেসিডেন্ট বা সচিবের মতো কোনও উচ্চ পদ পান, জগমোহন ডালমিয়ার পরে আবার বাংলা থেকে কেউ বোর্ডের প্রভাবশালী কর্তা হিসেবে উদয় হবেন।
ওয়াকিবহাল মহলের খবর, নতুন বোর্ডের সিংহাসনে নতুন রাজা হিসেবে কে বসবেন, তা এখন বিজেপি হাইকম্যান্ডের হাতে। শোনা যাচ্ছে, শনিবার দফায় দফায় অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বোর্ডের হাতে গোনা কয়েক জন শীর্ষ কর্তার। তাঁদের মধ্যে সৌরভ ছিলেন। তিনি যে দারুণ ভাবেই দৌড়ে রয়েছেন, এটাই তাঁর সব চেয়ে বড় প্রমাণ।
সৌরভের সঙ্গে অমিত পুত্র জয় শাহ উঠে এসেছেন অন্যতম প্রধান দাবিদার হিসেবে। ওয়াকিবহাল মহলের খবর, অমিত-পুত্র এবং সৌরভ দু’জনেই রয়েছেন প্রেসিডেন্ট এবং সচিব হওয়ার দৌড়ে। বাকিরা শনিবার রাজধানীতে হওয়া শীর্ষ বৈঠকের পরে কিছুটা হলেও পিছিয়ে। যেমন দিল্লির রজত শর্মা বা শ্রীনির প্রার্থী প্রাক্তন ক্রিকেটার ব্রিজেশ পটেল। তাঁদের হয়তো অন্য কোনও পদ দেওয়া হবে। রাজীব শুক্ল চেষ্টা শুরু করেছিলেন কিন্তু তাঁর বোর্ডের সভায় ঢোকার ছাড়পত্রই আটকে যাচ্ছে। লোঢা সংস্কারের পরে বোর্ডের পদও অনেক কমে গিয়েছে। প্রেসিডেন্ট, সচিব, যুগ্ম-সচিব, কোষাধ্যক্ষ, ভাইস প্রেসিডেন্ট, অ্যাপেক্স কাউন্সিলের এক জন সদস্য, গভর্নিং কাউন্সিলের এক জন সদস্য।
সৌরভ প্রথম থেকেই বার্তা দিয়ে রেখেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ছাড়া অন্য কোনও পদ নিতে খুব একটা ইচ্ছুক নন। তিনি ভারতের সেরা অধিনায়কদের এক জন। সিএবি প্রেসিডেন্ট পদে সদ্য পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই ফের সিএবি ছেড়ে বোর্ডে যেতে রাজি হবেন তখনই, যদি উচ্চতর কোনও পদ পান।
সারা দিনের বৈঠকের তাড়ার মধ্যে প্রাক্তন অধিনায়কের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। রাতে কলকাতায় ফিরে রবিবার সকালের উড়ানে তাঁর যাওয়ার কথা ছিল মুম্বই। অধিক রাতে উড়ান ছাড়তে দেরি হওয়ায় তিনি দিল্লীতেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রবিবার রাজধানী থেকেই সকালে মুম্বই চলে যাবেন। কারও কারও পর্যবেক্ষণ, সৌরভ যে মুম্বই যাচ্ছেন, সেটাই প্রমাণ দিল্লীর বৈঠক নিষ্ফলা হয়নি।
নিশ্চিত করে কেউ মুখ খুলতে না চাইলেও এক প্রভাবশালী কর্তার ইঙ্গিত, ‘‘যত দূর জেনেছি, সৌরভ এবং জয় শাহের মধ্যে কেউ প্রেসিডেন্ট হবে, কেউ সচিব। শেষ মুহূর্তে কী সমীকরণ দাঁড়ায়, সেটাই দেখার।’’ তবে এই দু’জনে প্রেসিডেন্ট এবং সচিব হলে বন্ধুত্বপূর্ণ রফার ব্যবস্থাও তৈরি রাখা হয়েছে বলে খবর। প্রশাসনিক দিক দেখবেন অমিত-পুত্র। ক্রিকেটের ব্যাপারে যাবতীয় সিদ্ধান্তের ভার ছেড়ে দেওয়া হবে সৌরভের হাতে। অন্যদিকে সচিবের দৌড়ে ‘ডার্ক হর্স’ থেকে যাচ্ছেন শ্রীনির পছন্দের প্রার্থী ব্রিজেশ। এখন শেষ মুহূর্তে ছক্কা হাঁকিয়ে কে হবেন নতুন বোর্ডের নতুন রাজা সেটাই দেখার!