গত ৫ আগস্ট সংসদে ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খারিজের ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে বিল পাশ করিয়ে কাশ্মীর থেকে লাদাখকে বিচ্ছিন্ন করে দু’টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করার ঘোষণা করেন তিনি। তারপর দু’মাস পেরিয়ে গেছে। তবে এখনও যে অচলাবস্থা কাটেনি উপত্যকায়, তার প্রমাণ বৃহস্পতিবার কাশ্মীরের সব খবরের কাগজের প্রথম পাতা। কোনও কাগজের প্রথম পাতাতেই সেদিন কোনও খবর ছিল না। ছিল জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের পাতাজোড়া একটি বিজ্ঞাপন। বাসিন্দাদের প্রতি আবেদন— সন্ত্রাসবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের খপ্পরে পড়বেন না, স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করুন। যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই এমনই সব প্রশ্ন উঠছে যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীরা যে বলে আসছেন— মানুষ উন্নয়নের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, কাশ্মীরে সব স্বাভাবিক? জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের ৬৭ দিন পরে, তা হলে কেন প্রশাসনকে বলতে হচ্ছে, সবাই স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করুন?
প্রসঙ্গত, এখনও বাস চলাচল বন্ধ কাশ্মীরে। মোবাইল ফোন স্তব্ধ, ইন্টারনেট নেই। বন্ধ অধিকাংশ দোকান-বাজারও। সর্বত্রই অস্ত্র হাতে টহল দিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। কার্যত ঘরবন্দী উপত্যকার মানুষের হাতে যেসব খবরের কাগজ পৌঁছেছে, তার সবকটিতেই রয়েছে একটাই সরকারি বিজ্ঞাপন। যাতে লেখা, ‘৭০ বছরের বেশি সময় ধরে জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষকে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনামাফিক অপপ্রচারের সাহায্যে তাঁদের জীবনকে সন্ত্রাস, ধ্বংস ও দারিদ্রের নিরবচ্ছিন্ন চক্রাবর্তে আবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। আপনারা কি তা থেকে মুক্তি চান না?’ বিজ্ঞাপনে সরকার এ-ও বলছে, ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নিজেদের সন্ততিদের বিদেশে পাঠিয়ে লেখাপড়া করান, আর সাধারণ ছেলে-মেয়েদের হিংসা, পাথর ছোড়া আর হরতালের পথে যেতে উত্তেজিত করেন। ফের সেই পথই নিয়েছেন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। আপনারা কি এখনও তা সহ্য করবেন? তাঁদের খপ্পরে পড়ে ধ্বংসকে বেছে নেবেন, না কি সাধারণ জনজীবনে ফিরবেন?’ এর পরেই কাশ্মীরবাসীর প্রতি আবেদন— স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য, জীবনযাত্রা শুরু করুন। এ হেন বিজ্ঞাপন নিয়েই এখন রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা চলছে।
