গতকাল সন্ধ্যের ঘটনা। চাঁদনি চক ই-মলের সামনে বেশ ভিড়। হঠাৎই সেই ভিড়ের মধ্যে থেকে এক ব্যক্তিকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিল ছ’জন। তারপর নিমেষেই গায়েব! বৃহস্পতিবার ভরসন্ধ্যায় মধ্য কলকাতার মতো জমজমাট এলাকায় এমন দৃশ্য দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন পথচলতি মানুষ। তাঁদেরই এক জন কলকাতা পুলিশের ১০০ ডায়ালে ফোন করে গাড়ির নম্বর-সহ গোটা বিষয়টি জানান।
এর পরেই অপহরণকারীদের খোঁজে শুরু হয় তৎপরতা। জানা যায়, গাড়িটির মালিক বীরভূমের বাসিন্দা। রাতভর কলকাতা এবং বীরভূমে নাকাতল্লাশি চালিয়ে শেষ পর্যন্ত পুলিশ গাড়িটিকে আটক করে। গ্রেফতার করা হয় ৬ অপহরণকারীকে। সবথেকে অবাক করা বিষয়, ধৃতদের মধ্যে তিন পুলিশকর্মী এবং এক জন বিএসএফ অফিসার রয়েছেন! তিন পুলিশকর্মীর মধ্যে দু’জন কলকাতা পুলিশের কমব্যাট ফোর্সের কর্মী— শ্যামল মণ্ডল ও জাকির খান, অন্য জন মহম্মদ হানিফ, রাজ্য সশস্ত্র বাহিনীর সপ্তম ব্যাটালিয়নের কর্মী। আর এক জন বিএসএফের কর্মীর নাম আমির হোসেন। বাকি দুই ধৃতের মধ্যে অভিজিৎ ঘোষ মালদহের ইংলিশ বাজারের বাসিন্দা এবং মানজারুল হক বীরভূমের লাভপুরের বাসিন্দা।
পুলিশ সূত্রে খবর, বীরভূমেরই বাসিন্দা সৌমেন বসু নামের এক যুবককে প্রায় এক কোটি টাকা দিয়েছেন বলে জেরায় দাবি করেছে অভিজিৎ ও মানজারুল। সৌমেন তাঁদের পরিচিত কয়েক জনকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ওই টাকা নেন। কিন্তু, প্রতিশ্রুতি মতো চাকরি দিতে পারেননি অভিযুক্ত সৌমেন। এরপর সেই এক কোটি টাকা ফেরৎ চাইলে, তা দিতেও অস্বীকার করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অপহরণের ছক কষে অভিজিৎ ও মানজারুল। এর পরেই তাঁরা যোগাযোগ করে লাভপুরের বাসিন্দা তাঁদের কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে যাঁরা পুলিশে কর্মরত।
ঠিক হয়, অপহরণ করে মুক্তিপণের টাকা ভাগ করে নেওয়া হবে নিজেদের মধ্যে। পরিকল্পনামাফিক তাঁরা সৌমেনের ওপর নজরদারি চালাতে থাকে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি বোলেরো গাড়ি নিয়ে ই-মলের কাছে পৌঁছয় অপহরণকারীরা। তারপরই অপহরণ করা হয় সৌমেনকে। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে নাকাতল্লাশির সময় অবশেষে বীরভূম থেকে আটক করা হয় সেই বোলেরো গাড়িটি। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্তদের এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।