মোদী জমানায় আচ্ছে দিন এসেছে দেশের ঋণ খেলাপিদের। বরাবরই এই অভিযোগ করে এসেছে দেশের বিরোধীরা। এই অভিযোগ যে মোটেও ভ্রান্ত নয়, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ বিজয় মালিয়া, নীরব মোদী-মেহুল চোক্সীরা। এঁরা সকলেই মোটা অঙ্কের ব্যাঙ্ক ঋণ না মিটিয়ে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু যেসব নামজাদা শিল্পপতিরা ব্যাঙ্ক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে ধার শোধ করেননি, অথচ দেশেই বহাল তবিয়তে আছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও নিষ্ক্রিয়। আর এর জেরে উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ছে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির নন পারফর্মিং অ্যাসেট(এনপিএ) বা অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ।
তথ্য জানার অধিকার আইনে (আরটিআই) একাধিক আবেদনের জবাবে যা জানা গিয়েছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। গত তিন বছরে অনাদায়ী এক লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির হিসেবের খাতায় বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে। যাঁদের ১০০ কোটিরও বেশি অনাদায়ী ঋণ রয়েছে এমন এনপিএ অ্যাকাউন্টের সংখ্যা চার শতাধিক। শুধু তাই নয়, ওই আরটিআই-এর পরিসংখ্যান থেকে এটাও স্পষ্ট, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির এনপিএ বৃদ্ধির পিছনে বড় ছাপ ফেলেছে নোট বাতিলের ঘটনা।
ধুঁকছে গাড়ি-সহ একাধিক শিল্প। আর্থিক বৃদ্ধি নেমে এসেছে ৫ শতাংশে। এর ছাপ অবধারিত ভাবেই ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার উপরেও পড়েছে। কিন্তু তার চেয়েও উদ্বেগজনক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদক সম্পদ ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলা। এক সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলের পক্ষ থেকে করা একাধিক আরটিআই থেকে জানা গিয়েছে, প্রতি বছরই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এই অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ। গত তিন বছরে ১০০ কোটি টাকার বেশি ঋণখেলাপি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৪১৬। তাদের মিলিত ঋণের পরিমাণ এক লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা।
এই অ্যাকাউন্টগুলি থেকে আর ঋণ ফেরতের সম্ভাবনা নেই ধরে নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে রিপোর্ট দিয়েছিল ব্যাঙ্কগুলি। আরবিআই-এর নির্দেশেই সেগুলি এনপিএ অ্যাকাউন্ট হিসেবে ঘোষণা করেছে ব্যাঙ্কগুলি। আরটিআই সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২০১৪-১৫ সাল থেকেই সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির ঘাড়ে এই অনাদায়ী ঋণ বা অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা ক্রমেই বাড়ছে। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সব ব্যাঙ্কের এনপিএ-র মোট পরিমাণ ২ লক্ষ ১৭ হাজার কোটি টাকা।
হিসেব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ১০৯টি অ্যাকাউন্টে এনপিএ ছিল ৪০ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের ৩১ মার্চে অনাদায়ী ঋণের অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯৯, মোট ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয় ৬৯ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। পরের বছর ৮ নভেম্বর নোটবন্দী করে মোদী সরকার। হিসেব বলছে, নোটবন্দীর পরের দু’বছরে লাফিয়ে বেড়েছে এই ধরণের অ্যাকাউন্টের সংখ্যা। ২০১৬ সালের ৩১ মার্চের অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১৯৯। ২০১৮ সালের ৩১ মার্চে বেড়ে হয় ৩৪৩। অর্থাৎ অনুৎপাদক সম্পদের বৃদ্ধি ৭২ শতাংশ। টাকার অঙ্কে ৬৯ হাজার ৯৭৬ কোটি থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৭৯৭ কোটি।