বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে মোদী সরকারের বাজেটে যেমন তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি, তেমন চাহিদার মানোন্নয়নেও কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারেনি কেন্দ্র। এই দুই কারণেই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে ভারতের শিল্প সংস্থাগুলোকে। গাড়ি শিল্প থেকে বিস্কুট-সর্বত্রই বাজারে চাহিদা বাড়ন্ত। বিক্রি না হওয়ায় বন্ধ করতে হচ্ছে উৎপাদন। বস্ত্র এবং নির্মাণ শিল্পের অবস্থাও তথৈবচ। অবস্থা এমনই যে কর ছেঁটে কর্পোরেটকে বিপুল সুবিধা দেওয়ার পরেও লগ্নির কথা এখনও সে ভাবে মুখে আনছেন না বিনিয়োগকারীরা। আগের মতোই ঝিমিয়ে বৃদ্ধির হার। চাহিদাও বাড়ন্ত। অথচ রাজকোষ ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রায় বেঁধে রেখে সরকারি ব্যয় বিপুল বাড়ানোর রসদও ক্রমে কমে আসছে কেন্দ্রের ভাঁড়ারে।
এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আরও সুদ কমাবে এমন আশা নিয়েই বসে কেন্দ্র ও শিল্পমহল। কিন্তু এ বার মূল্যবৃদ্ধি মাথা চাড়া দিতে শুরু করায়, সেই সুযোগও আর কত দিন মিলবে, উঠছে সেই প্রশ্ন। এমনিতে এখনও খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লক্ষ্যমাত্রার (৪ শতাংশ) নীচে। কিন্তু সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সমীক্ষা অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে তা পৌঁছতে পারে ৩.৭ শতাংশে। যা গত এক বছরে সব থেকে বেশি। অনেকে বলছেন, এতে আগামী ঋণনীতিতেও আর এক দফা সুদ ছাঁটাই হয়তো আটকাবে না। কিন্তু অর্থনীতির যা হাল, তাতে শুধু ওই ওষুধে তার চাঙ্গা হওয়ার লক্ষণ এখনও পর্যন্ত নেই। ফলে ঋণের কিস্তির অঙ্ক কমিয়ে চাহিদাকে চাঙ্গা করতে সুদ ছাঁটাইয়ের ‘প্রয়োজন’ সম্ভবত থাকবে তার পরেও। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির এই প্রবণতা বজায় থাকলে, তা আদৌ কতটা সম্ভব হবে, ঘুরপাক খাচ্ছে সেই প্রশ্নই।
উৎসবের এই মরশুমেও প্রায় সমস্ত পণ্যেরই চাহিদা তলানিতে। নতুন কাজের সুযোগ তৈরি তো দূর অস্ত, বরং চাহিদায় ভাটার কারণে কারখানা বন্ধ থাকায় কাজ হারাচ্ছেন অনেকে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বেশ কিছু পণ্য-পরিষেবায় জিএসটির হার কমিয়েছে সংশ্লিষ্ট পরিষদ। কেন্দ্র নানা সুবিধা ঘোষণা করেছে ধুঁকতে থাকা বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য। বৃহস্পতিবার সে কথা ফের বলেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কর্পোরেট করে বিপুল ছাড় দিতে গিয়েই প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকার ধাক্কা ঘাড়ে নিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু এর পরেও চলতি আর্থিক বছরে বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৮ শতাংশ থেকে ৬.১ শতাংশে নামিয়ে নিয়ে এসেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আবার তা কমিয়ে ৫.৮ শতাংশ করেছে মূল্যায়ন সংস্থা মুডি’জ-ও।