কলকাতার সাবেকি পুরনো পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম দক্ষিণ কলকাতার সিংহি পার্কের পুজো। অবস্থান গত ভাবে একডালিয়া এভারগ্রিনের উল্টো দিকের গলিতেই এই পুজোর আয়োজন হলেও চিরকালই নিজস্ব আলোয় আলোকিত সিংহি পার্ক। মূলত প্রতিবারই দেশের কোনও না কোনও মন্দিরের আদলে তৈরি হয় সিংহি পার্কের মন্ডপ। আগেরবার যেমন গুজরাতের মেহসানা জেলার মোধেরা গ্রামের এক সুপ্রাচীন সূর্য মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছিল মণ্ডপ। তবে এ বছর ৭৮তম বর্ষে চিরাচরিত প্রথা থেকে সরে এসে এক কাল্পনিক মন্দির গড়েছে সিংহি পার্ক। যাতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাংলা তথা উড়িষ্যার বহু প্রাচীন শিল্প পট চিত্রের কাজ।
এই পট চিত্র যাঁরা আঁকেন তাঁরা সকলেই মূলত পুরুলিয়া বা মেদিনীপুরের মানুষ এবং অধিকাংশই মুসলিম ধর্মাবলম্বী। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে এঁরা সকলেই কিন্তু নিজেদের ধর্ম ভুলে গিয়ে ভারতীয় তথা হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি আঁকেন, তাদের জয়গান করেন। আবার পটচিত্র দেখানোরও একটি নিয়ম আছে। মূলত একটি কাপড়ের ওপর বিভিন্ন ছবি আঁকা থাকে। যখন পটচিত্র দেখানো হয় তখন কাপড়টি ধীরে ধীরে খুলে সেসব ছবি দেখানো হয় এবং তার সঙ্গে বিভিন্ন দেবদেবীর স্তুতি বাক্য পাঠ করা হয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষগুলোই হিন্দু দেবদেবীর স্তুতি বাক্য সাবলীল ভাবে পাঠ করেন। ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’ – পটচিত্রের ব্যবহার করে, এই বার্তাই দিতে চলেছে সিংহি পার্ক।
গভর্মেন্ট আর্ট কলেজের প্রাক্তনী শিল্পী শ্রী মিঠুন দত্তের ভাবনা ও সৃজনে সেজে উঠেছে মন্ডপ। মন্ডপ তৈরি হয়েছে, প্লাইউড, থার্মোকল ও কাপড় দিয়ে। কাপড়ের উপর একধরনের ওয়াশ ব্যবহার করে পটের এফেক্ট আনা হয়েছে। পট সাধারণত টু ডাইমেনশনাল হয়। কিন্তু এখানে পট থ্রী ডাইমেনশনাল। তবে এখানের মূল আকর্ষণ পটচিত্রের মাধ্যমে তৈরি এক অভিনব ঝাড়লণ্ঠন। যা কলকাতায় এর আগে কেউ দেখেনি বলেই দাবি পুজোর উদ্যোক্তাদের। মূলত লোকমুখে শুনে এই পটচিত্রের ঝাড়লণ্ঠন দেখতেই সিংহি পার্কে উপচে পড়ছে মানুষের ভিড়।