তাঁদের জীবনে হাজারো সমস্যা। কারও স্বামী গত হয়েছেন বেশ কয়েকবছর আগে। কারও স্বামী আবার শয্যাশায়ী। টাকার অভাবে বন্ধ হচ্ছিল চিকিৎসা। মা হয়েও পারছিলেন না ছোট্ট সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে। দু’বেলা অন্ন কীভাবে সন্তানদের মুখে তুলে দেবেন সেই ভেবে আকূল ছিলেন। কিন্তু জীবনযুদ্ধে হার মানার পাত্রী নন ওঁরা। দুর্গারই যে আর এক রূপ তাঁরা। ‘ঢাকের কাঠি’ হাতে তুলেই স্বনির্ভর হয়েছেন মন্তেশ্বরের এমনই কয়েকজন অসহায় ‘দুর্গা’। মহিলা ঢাকির দল গড়ে নিজেরাই হয়েছেন ‘দশভূজা’।
মাত্র ১১ মাস আগে তৈরি এই মহিলা ঢাকির দলই এখন ডাক পাচ্ছে বাংলাজুড়ে। নানা জেলায় গিয়ে ঢাকের আওয়াজে মন জয় করছেন তাঁরা। পারদর্শিতার জন্য কদরও রয়েছে। পারিশ্রমিকও পাচ্ছেন ভাল। ফলে আর পুরনো জীবনে ফিরে দেখতে হচ্ছে না তাঁদের। সুমিত্রা দাস, নবানী দাস, রাণু দাস, পূর্ণিমা দাসদের মতো আরও অনেকে কখনই ভাবেননি ঢাকের তালেই তাঁরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।
এমনই একজন মহিলা, সুমিত্রাদেবী জানান, এক বছর আগে তাঁর পরিবার তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। কীভাবে বেঁচে থাকবেন, তা ভাবতেই পারছিলেন না। আবার পূর্ণিমাদেবী জানান, তাঁর স্বামী গাছ থেকে পড়ে অসুস্থ হয়ে গিয়েছেন। সংসার চালানোর টাকা ছিল না। স্বামীর মৃত্যু হওয়ায় সংসার চালাতে সমস্যায় পড়েছিলেন অন্য তিন মহিলা। আগে অনেকেই মাঠে কাজ করতেন। কিন্তু এখন সকলেই এক হয়েছেন স্বনির্ভর হতে। রিঙ্কু দাস, মায়া দাস, আশা দাস, আদুরি দাস-সহ প্রায় ১২ জন রয়েছেন এই দলে।
জানা গিয়েছে, স্থানীয় এক ঢাকি সুদেব দাস এক বছর আগে ওই মহিলাদের ঢাক বাজানো শেখার পরামর্শ দেন। তারপরে সকলে কয়েকমাস ধরে অনুশীলন করে শিখে ফেলেন ঢাক বাজানো। প্রথমে স্থানীয় কয়েকটি অনুষ্ঠান করে মানুষের মন জয় করেন অন্নপূর্ণারা। এখন চারিদিক থেকে ডাক আসতে শুরু হয়েছে। তাঁদের আর্জি, সরকার যদি পাশে এসে দাঁড়ায়, তাহলে জীবনে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।