রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ ও বিজেপির বিরুদ্ধে বরাবরই এই অভিযোগ উঠেছে, তাদের লক্ষ্য ‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থান’-এর সফল বাস্তবায়ন করা। অর্থাৎ ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন। এবার সরাসরিই ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বপ্লে দাবি করলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। ভারত ‘হিন্দুরাষ্ট্র’— এই বিষয়টি ছাড়া আর সব কিছু বদল হতে পারে বলে মন্তব্য করলেন ভারত। সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ যা-ই বলুক, ভাগবতের মতে, যতক্ষণ এক জন লোকও ভারতকে নিজের মাতৃভূমি ও নিজেকে হিন্দু বলে মনে করবেন, ততক্ষণ এই দেশ হিন্দুরাষ্ট্র থাকবে।
তবে এমন সব বলার পিছনে ভাগবতের অবশ্য একটি লক্ষ্য আছে। সেটি হল, বাকি যে কোনও বিষয়ে সঙ্ঘের অবস্থান যে সময়ের হিসেবে বদল হতে পারে, তা বোঝানো। দিল্লীতে সঙ্ঘেরই ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতা সুনীল অম্বেকরের একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভাগবত। ‘একবিংশ শতাব্দীতে আরএসএসের রোডম্যাপ’ নামে এই বইয়ের প্রকাশের আনুষ্ঠানিক প্রকাশের আগেই তাতে ‘সহবাস’, ‘সমকামী বিবাহে’র মতো বিষয় ছুঁয়ে যাওয়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অম্বেকর প্রকাশ্যেই বলেছেন, সঙ্ঘ সমকামী বিবাহের পক্ষে না হলেও ভবিষ্যতে এই নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তাঁর এই বক্তব্যকে সমকামী বিবাহ নিয়ে সঙ্ঘের আগের অবস্থানে বদল বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছিল।
অনুষ্ঠানে অবশ্য ‘সমকামী বিবাহ’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি ভাগবত। কিন্তু স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কোনও বইতে সঙ্ঘ সীমাবদ্ধ নয়। ফলে যে কেউ নিজের মত রাখতেই পারেন। তিনি বলেন, ‘সকলেই মানুষ। সমাজ জীবনে সকলের জায়গা আছে। প্রাচীন ইতিহাসেও এমন লোক ছিলেন। জরাসন্ধের দুই সেনাপতি ছিলেন। মহাভারতে এক যোদ্ধা ছিলেন, যাঁর পিছনে অর্জুনকেও লুকোতে হয়েছিল। আমরা এই নিয়ে বেশি আলোচনা করিনি, কারণ এটি এত বড় সমস্যা নয়।’ এ প্রসঙ্গে ‘ভারত হিন্দুরাষ্ট্র’ নিয়ে সঙ্ঘের পুরনো অবস্থান মনে করিয়ে ভাগবত বলেন, “ওই একটি বিষয়ে কোনও বদল হবে না। কারণ, আমরা হিন্দু তৈরি করিনি, ভারত দেশও গড়িনি। হাজার বছর ধরে এটিই চলে আসছে।”