সামনেই পুজো। খাদ্যপ্রেমী বাঙালীদের কাছে এই উৎসবের মরশুম যেন বসন্তের মিঠে হাওয়া। মাংস- বিরিয়ানি- চাউমিন-মোগলাই এইসব খেয়েই বাঙালী কাটিয়ে দিতে পারে গোটা ৪ টে দিন। কিন্তু বাঙালির রসনাতৃপ্তিতে লুচির জুড়ি মেলা ভার। আর সেই লুচিই এবার হাজির গেল মিড ডে মিলের থালায়। পুজোর আগে কচি কচি মুখে হাসি ফোটাতে ফুলকো লুচি আর ছোলার ডালকেই হাতিয়ার করলেন ধূপগুড়ির স্কুলের মাস্টারমশাই-দিদিমণিরা। এমনকি মিলল শেষ পাতে পায়েসও।
সকাল সকাল বই বগলে করে পড়তে আসে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। কারোর বাবা রেলের কুলি-মজুর, কেউ বা আবার মুটে। জলখাবার খেয়ে এসছো, জিজ্ঞাসা করলেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে তারা। সেটা আবার কী? দু’বেলা পেট ভরাতেই যা ঝক্কি। হয় একটু শুকনো বাসি রুটি বা তুলে রাখা পান্তা। তাই খেয়েই স্কুলের পথ ধরে খুদেরা। ফুলকো লুচি, ছোলার ডালের গন্ধ শুঁকেছে বাবুদের বাড়িতে, কিন্তু চেখে দেখা হয়নি হয়তো বহুদিন। তাই ছোট ছোট বাচ্চাদের রসনাতৃপ্তিতে স্কুলের শিক্ষকরা হাজির করলেন লুচিই। তাঁরা জানিয়েছেন, মিড ডে মিলে লুচি হবে শুনে বাচ্চাদের সে কি আনন্দ!
ধূপগুড়ির বারোঘড়িয়া বটতলী স্বর্ণময়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্টেশন লাগোয়া ছোট্ট স্কুলটাতে জৌলুস নেই খুব একটা। তবে আন্তরিকতা আছে ভরপুর। আর পাঁচটা গ্রামের স্কুলের মতো মিড ডে মিলে দায়সারা খিচুড়ি বা সবজির ঘ্যাঁট থাকে না। বদলে থাকে দুধভাত। গরমকালে দুধভাতের সঙ্গে আবার ফাউ মেলে হিমসাগর আম। স্টার্টারে আবার ম্যাঙ্গো শেক।
এহেন স্কুলে পুজোর আগেও চমক থাকবে না তাই কী হয়! পুজো শুরু হয়ে যাচ্ছে। স্কুলেও তালা পড়বে। তার আগে গত দু’দিন ধরে স্কুলে সাজো সাজো রব। শিক্ষকরা বাজার করেন। ৮ কিলো ময়দা, ৪ লিটার সয়াবিন তেল, ৭ কিলো দুধ, ২ কিলো চিনি ইত্যাদি। বাচ্চাদের জমিয়ে ভোজ খাওয়াতে হাজির হয়ে যায় একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর লোকজনেরাও। রান্নার ঠাকুরের সঙ্গে হাত লাগান শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ফুলকো লুচির গন্ধে বাচ্চারাও তাড়াতাড়ি পথ ধরে স্কুলের।
২০১৩ সাল থেকে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন জয় বসাক। বলেছেন, “বাচ্চাদের চোখের ভাষাই বলে দিচ্ছে লুচি খেয়ে ওরা কতটা খুশি। অভাবী পরিবার থেকেই শিশুরা আসে এই স্কুলে পড়তে। শারদীয়ায় আমরা আনন্দ করব, ভালোমন্দ খাব, আর বাচ্চারা খাবে না, তাই কী হয়!“ তিনি বলেছিলেন, “জানেন, বছর চারেক আগেও পড়ুয়াদের স্কুলে উপস্থিতির হার ছিল ৫০ শতাংশ। গত দেড় বছর ধরে মিড ডে মিলে কী করে নতুনত্ব আনব, তাই নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করি। হাতে হাতে ফল মিলেছে। এখন প্রতিদিন উপস্থিতির হার থাকে প্রায় ৮০ শতাংশ।”