প্রায় ৮৮ একর জায়গায় ১৭ হাজারের মতো বাসিন্দা। আর পুজো ঘিরে তাঁদের অফুরন্ত প্রাণশক্তি। মূলত এই মূলধনের জোরেই প্রতি বছত দক্ষিণ কলকাতার বিগ বাজেটের পুজোদের টেক্কা দেয় দমদম পার্কের যে পুজোগুলি, তাদের মধ্যে অন্যতম দমদম পার্ক তরুণ সংঘ। থিম পুজোর ‘বর্ণপরিচয়’ কবেই ‘সহজ পাঠ’ করে নিয়েছে এই পুজো। এবার ৩৪ তম বর্ষে তাদের থিম ‘২০১৯-এ ২০৯১’। রিন্টু দাসের ভাবনায় সেজে ওঠা এই মণ্ডপে দর্শনার্থীরা দেখতে পাবেন, গাছের ডালগুলোকে ব্যাকবোন বানিয়ে, তার ওপর তৈরি হচ্ছে বহুতলের সারি। গাছে ফল বা ফুল নেই। রয়েছে ছোট বাচ্চারা। তাদের মুখে মাস্ক, পিঠে স্কুলের ব্যাগ। সেই ব্যাগ নিয়ে তারা যাচ্ছে অক্সিজেনের খোঁজ করতে। মণ্ডপের ভিতর অর্থাৎ দেবীমূর্তির অধিষ্ঠান যেখানে, সেই জায়গার সজ্জা আবার অন্যরকম। সেখানে একটি সাবেকি দুর্গাদালান, হাঁড়িকাঠ, খাঁড়া, তুলসীমঞ্চ। ছোট মন্দিরে টিমটিমে প্রদীপের আলোয় দেখা যাবে দশভুজার বিগ্রহ।
থিম সম্পর্কে তরুণ সংঘের সম্পাদক দেবরাজ শিকদার এখন খবরকে বলেন, “এ বছর আমাদের নিবেদন ‘২০১৯-এ ২০৯১’। ২০৯১ সালে পরিবেশগত ও সামাজিক দিক থেকে কী জায়গায় পৌঁছব আমরা, সেটাই আমাদের থিমের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের মন্ডপে চারটে ভাগ রয়েছে। প্রথম ভাগে দেখা যাবে, গাছগুলো খুব ভাল অবস্থায় রয়েছে, কিন্তু তার কান্ডগুলি কঙ্কালসার। এবং গাছের ডালপালা থেকে প্রচুর বাচ্চার মুখ নেমে আসবে, যেগুলি অক্সিজেন মাস্ক পরা। কারণ ২০৯১তে অক্সিজেনের অভাব হবে বলেই আমরা মনে করছি। পরের ধাপে দেখা যাবে, একটা বিশাল বড় আবাসনের ঢেউ পৃথিবীকে ঢেকে দিচ্ছে৷ কারণ, এখন গাছপালা কেটে, জলাশয় বুজিয়েই একের পর এক আবাসন তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি দেখা যাবে, বাইরে থেকে সুন্দর লাগলেও পৃথিবীর শিরদাঁড়া বেরিয়ে গেছে। ভিতরটা অন্তসারশূন্য হয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তৃতীয় ধাপে দেখা যাবে, একটা ৩০০ বছরের পুরনো বাড়ি৷ যেখানে একটি মন্দির আছে এবং সেখানে দুর্গাপুজো হয়। তাই বাড়িটা প্রমোটারের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হলেও পাড়া-পড়শিদের অনুরোধে আবার চেষ্টায় সেখানে আবার দুর্গাপুজো হচ্ছে। আর শেষ ধাপে দেখা যাবে, একটি গাছ অপারেশন থিয়েটারে শুয়ে রয়েছে, আর তার গর্ভ থেকে একটি শিশু চারাগাছ নিয়ে বেরাচ্ছে। অর্থাৎ সবকিছুর শেষেও একটা আশা থাকে। একটা শেষ সুযোগ পাওয়া যায়, ভুল শুধরে নেওয়ার। এই বার্তাই আমরা আমাদের পুজোর মাধ্যমে তুলে ধরছি। সমগ্র ভাবনাটাই শিল্পী রিন্টু দাসের। পাথরের বিগ্রহের ডিজাইনও তাঁরই। যেটা উড়িষ্যা থেকে তৈরি করে আনা হয়েছে। এমনকী আলোকসজ্জাও তিনি নিজেই করেছেন।’ ২০৯১তে পৃথিবীর চেহারা কেমন হবে, দেবীদর্শনের আড়ালে স্বচক্ষে সেই ভবিষ্যৎ দেখতে যে প্রতিবারের মতো এবারও দর্শনার্থীদের ভিড় উপচে পড়বে তরুণ সংঘের পুজোয়, তা জোর দিয়ে বলা যায়।