গত ৫ আগস্ট সংসদে ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খারিজের ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে বিল পাশ করিয়ে কাশ্মীর থেকে লাদাখকে বিচ্ছিন্ন করে দু’টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করার ঘোষণা করেন তিনি। তারপর প্রায় দু’মাস হতে চলল। কিন্তু এখনও স্বাভাবিক হয়নি কাশ্মীর। যার ফলে স্কুল খুললেও সেখানে যেতে পারছে না উপত্যকার পড়ুয়ারা। যেমন দিদি-দাদার সঙ্গে এখন প্রায়ই ঝগড়া হচ্ছে বছর চোদ্দোর আফনান আহমেদ দারের। দিদি আর দাদা পড়াতে বসাতে চাইলেই রেগে যাচ্ছে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আফনান। বলছে, ‘যা পড়ার স্কুলেই পড়ব।’
পুরনো শ্রীনগরের এক বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়া আফনানের মতো অবস্থা এখন কাশ্মীরের অধিকাংশ স্কুল পড়ুয়ারই। প্রায় দু’মাস হল নিষেধাজ্ঞার কবলে রয়েছে উপত্যকা। স্কুল খুললেও পড়ুয়াদের পাঠাতে সাহস পাচ্ছেন না অধিকাংশ অভিভাবক। ফলে স্কুলে হাজিরা দিচ্ছেন কেবল শিক্ষক ও অন্য কর্মীরা। ছোট্ট আফনানের অভিযোগ, ‘রোজ বিকেলে খেলতাম। এখন বাবা-মা বেরোতেই দিচ্ছে না।’ তাঁর মতো আরও অনেকেই তাদের অভিভাবকের কাছে জানতে চাইছে কেন তারা স্কুলে যেতে পারবে না? কেন খেলতে যাবে না? অভিভাবকেরা প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন। বাইরে গেলে বিপদ হবে ছাড়া আর বিশেষ কিছু বলারও নেই তাঁদের।
উপত্যকার একটি প্রথম সারির স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ে আনায়ত ইমরান মালিক। তাঁর কথায়, ‘স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে কত দিন দেখা হয় না।’ বাড়িতে এখন ভাই-বোনের সঙ্গে খেলে সে। কাছেই প্রাইভেট টিউশন নিতে যায়। তাঁর বাবা ইমরান মালিক বলেন, ‘প্রাইভেট টিউশন যে স্কুলের বিকল্প নয় তা আমি জানি। কিন্তু অন্তত পড়াশোনার সঙ্গে যোগাযোগটা থাকুক।’ একই অবস্থা হায়দরপোরা এলাকার শামশাদা আখতারের বাড়িতেও। শামশাদা আবার নিজেই স্কুলের শিক্ষিকা। তাঁর কথায়, ‘আমার ছেলেমেয়ে এক সপ্তাহ ধরে আইসক্রিম খেতে চাইছে। আইসক্রিমের দোকান কেন বন্ধ তা কী ভাবে বোঝাব? স্কুলেও কোনও পড়ুয়া আসছে না। আমরাই রোজ স্কুলে যাই।’ ফলে ‘তালাবন্ধ’ কাশ্মীরে যে এখন ‘বন্দী’ খোদ শৈশবই, তা বলাই বাহুল্য।