ঠিক কার দিকে সমর্থন থাকা উচিত? সারা বিশ্বের অ্যাথলেটিক্স ভক্তদের সামনে অনেকটা এ রকম একটা প্রশ্ন ছিলই বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স মিটের ১০০ মিটার ফাইনালের আগে। যে ফাইনালকে বলা হচ্ছিল, ক্রিস্টিয়ান কোলম্যান ও জাস্টিন গ্যাটলিনের ডুয়েল। উসেইন বোল্টের জমানা শেষ হয়েছে দু’বছর আগেই। এবার দেখার ছিল কে হন বিশ্বের দ্রুততম মানব। হট ফেভারিট হিসেবে ১০০ মিটার দৌড়ে এগিয়েছিলেন কোলম্যানই, তবে কালো ঘোড়া হিসেবে ধরা হচ্ছিল জাস্টিন গ্যাটলিনকেও। কিন্তু ২৩ বছরের কোলম্যান দুর্দান্ত পারফরমেন্স করে দেখিয়ে দিলেন, আগামী বছর টোকিওতে নজর রাখতে হবে তাঁর দিকেই। বোল্টের বিশ্বরেকর্ডের থেকে মাত্র ০.১৮ সেকেন্ড পিছনে শেষ করেছেন তিনি। সময় ৯.৭৬ সেকেন্ড, যা তাঁর ব্যক্তিগত সেরা। সবথেকে বড় ব্যাপার, দ্বিতীয় স্থানাধিকারী গ্যাটলিনকে পিছনে ফেলেছেন ০.১৩ সেকেন্ডে, যা আধুনিক যুগে ১০০ মিটারে দেখাই যায় না। তৃতীয় হয়েছেন কানাডার আন্দ্রে ডে গ্রাসে (৯.৯০ সেকেন্ড)। প্রথম দশে জামাইকার একমাত্র প্রতিনিধি য়োহান ব্লেক, যিনি রেস শেষ করেছেন পঞ্চম স্থানে।
দোহায় ১০০ মিটার ফাইনালে নামতে পারার সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগালেন ২৩ বছরের কোলম্যান। গ্যাটলিনকে হারিয়ে তিনিই সোনা জিতলেন ৯.৭৬ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড়ে। তাঁর এই সময় সর্বকালের হিসেবে ষষ্ঠ দ্রুততম। দু’বছর আগে লন্ডনে সোনা জিতেছিলেন গ্যাটলিন। যিনি ইতিহাসে সামিল হতে পারলেন না চ্যাম্পিয়নশিপের সোনা ডিফেন্ড করতে না পেরে। ইতিহাসে মাত্র তিনজন অ্যাথলিট বিশ্ব মিটে ১০০ মিটারের সোনা ডিফেন্ড করতে পেরেছিলেন। কার্ল লুইস, মরিস গ্রিন ও উসেইন বোল্ট। গ্যাটলিন তাঁদের ছুঁতে পারলেন না ঠিকই, কিন্তু ৩৭ বছরেও বিশ্ব মিটে রুপো কম কৃতিত্বের নয়। ব্রোঞ্জ জিতলেন কানাডার আন্দ্রে দে গ্রাসে।
যতই সোনা জিতুন কোলম্যান, তাঁকে ঘিরে বিতর্ক কমছে না। আমেরিকান কিংবদন্তি অ্যাথলিট মাইকেল জনসন বলেছেন, ‘মিটে নামতে পারলেও কোলম্যানকে ঘিরে যে বিতর্ক আছে, তাতে অ্যাথলেটিক্সের মুখ কখনওই হতে পারবে না ও।’ তাঁর বিরুদ্ধে আমেরিকান ডোপিং বিরোধী সংস্থার অভিযোগ ছিল, ১২ মাসে তিনবার ডোপ পরীক্ষা দেননি কোলম্যান। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে কোলম্যান বলেছিলেন, ওই তিন পরীক্ষার একটি ছিল নির্দিষ্ট সময়ের আগে। ওই একটি ভুলের জন্য আমেরিকান ডোপিং বিরোধী সংস্থা অভিযোগ তুলে নেয়। ফলে বিশ্ব মিটে নামার ছাড়পত্রও পেয়ে যান আমেরিকান অ্যাথলিট। এত বিতর্কের মাঝে সোনা জেতার পর কোলম্যানের বক্তব্য, ‘আমি ভদ্রলোক। আমি এখানে খেতাব জিততে এসেছি।’ জুড়ে দেন, ‘এই সময়টা অবিশ্বাস্য। আমার কাছে এখন আকাশটাই সীমা। এখনও অনেক বিষয়ে আমাকে উন্নতি করতে হবে। ১০০ মিটার দৌড়নোর সময় এখনও কমাতে পারি।’ অন্য দিকে গ্যাটলিন অনেকদিন পর পাশে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পেলেন না বোল্টকে। ফাইনালে নামার আগে বলেছিলেন, ‘উসেইন ছাড়া বিশ্ব মিট আমার কাছে বেশ অদ্ভুত।’ সেই ‘অদ্ভুত’ ফাইনালে তিনি কোলম্যানের থেকে পিছিয়ে থাকলেন ০.১৩ সেকেন্ড।