আকাশ পানে চাইলেই সাদা মেঘের ভেলা আর মাঠে-ঘাটে কাশ ফুলের মাথা দোলানো জানান দিচ্ছে, মাঝে বাকি আর কয়েক দিন। তারপরেই ঘরে ফিরবে ঘরের মেয়ে উমা। শুরু হবে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব। আট থেকে আশি সবার মুখেই হাসি ফোটায় এই উৎসব। তবে দিন পাঁচেকের এত হইচই, আনন্দের মাঝে যাঁরা এই হাসি ফোটানোর উৎস তাঁরাই থেকে যান অন্ধকারে। পাদপ্রদীপের নীচে। তাঁদের কেউ কোনও দিন পুরষ্কৃত করে না। কেউ নামটুকুও হয়ত জানতে পারে না। ৬৯তম বর্ষে শিল্পী অনিমেষ দাসের ভাবনায় সেই সব আড়ালে থাকা মানুষদের কুর্নিশ জানাচ্ছে কালীঘাটের ৬৬পল্লী।
৬৬ পল্লীর সভাপতি রজত সেনগুপ্ত এখন খবরকে বলেন, “আমাদের এবারের থিম হচ্ছে ‘উৎসব’। যাঁদের নিয়ে আমাদের এই কর্মকান্ড, যাঁরা তাদের গ্রাম, পরিবার-পরিজনকে ফেলে এসে তিন থেকে সাড়ে তিন মাস আমাদের কাছে থেকে তাঁদের শ্রম, উৎকর্ষ, নিজস্বতা দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করে, সেই সকল শিল্পীদের উৎসর্গ করেই আমাদের এবারের থিম। ওই সকল শিল্পীরা পুজোটা প্রায় এখানেই পালন করে। কারণ তাঁরা যখন ফেরত যায় তখন প্রায় পুজো শুরু হয়ে যায়। ফলে উৎসবের আনন্দটা উপভোগ করা হয় না তাঁদের। এই বিষয়টিকেই তুলে ধরা হবে আমাদের থিমের মাধ্যমে।”
রজতবাবু জানান, ‘আমাদের মন্ডপের পুরোটাই প্রায় বাঁশ দিয়ে তৈরি। এছাড়া লক্ষ্মীর ঝাঁপি, দরমার বেড়া, বাঁশ কেটে কেটে তৈরি করা ঢাক ও মাটির প্রদীপও ব্যবহার করা হয়েছে। আসলে সেই সকল শিল্পীরা মন্ডপ গড়তে শহরে এসে বাড়ির যে যে জিনিসগুলির কথা বারবার মনে করেন, সেইসব কিছু দিয়েই আমরা আমাদের মন্ডপ গড়ছি। এই গোটা ভাবনা ও সৃজনের দায়িত্বে রয়েছেন শিল্পী অনিমেষ দাস। প্রতিমা গড়ছেন সৌমেন পাল। এবং আলোকসজ্জার দায়িত্বে রয়েছেন শুকদেব মাইতি।’ তিনি এ-ও জানান, আগামী ১লা অক্টোবর মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাতেই হবে তাঁদের পুজোর উদ্বোধন।
প্রতিবারই তাদের নজরকাড়া থিম দেখার জন্য মানুষের ঢল নামে দক্ষিণ কলকাতার এই হেভিওয়েট পুজো ৬৬ পল্লীতে। এবারও যে তার অন্যথা হবে, তা তাদের ভাবনার চমকই বলে দিচ্ছে।