মায়ের আগমনী বার্তা বেজে উঠেছে। বাতাসে পুজোর গন্ধ জোরদার। কিন্তু বাংলার জেলাগুলোতে কোথাও যেন হারিয়ে গেছে। গ্রাস করেছে এনআরসি আতঙ্ক। সবাই ছুটছে কার্ডের লাইনে। চলছে এনআরসি নিয়ে অকারণ গুজব। ভোটার কার্ড আপডেট করা হোক বা আধার কার্ড সংশোধন কিংবা রেশন কার্ড ডিজিটাইজেশনের কাজ- লাইন দিতে হচ্ছে সবেতেই। কখনও সারা রাত ধরে লাইনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকছেন গ্রাম থেকে আসা মানুষজন, কখনও আবার পড়ছেন ঠকবাজের পাল্লায়। কখনও লাইনে হুড়োহুড়িতে মৃত্যু হচ্ছে কারও তো কখনও ভিটে হারানোর আতঙ্কে আত্মঘাতী হচ্ছেন কেউ।
শিলিগুড়িতে যেমন ২০১৩ সালের আগে কেনা গাড়ির তথ্য পরিবহণ দপ্তরে গিয়ে নতুন করে আপডেট করাতে হচ্ছে। এর সঙ্গে এনআরসি আতঙ্ক মিলে নাজেহাল শিলিগুড়িবাসী। গাড়ির দূষণ নিয়ন্ত্রণের শংসাপত্র জোগাড় করতে গেলেই মালিকদের পরিবহণ দপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে গাড়ির বিমা ও রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত তথ্যের জেরক্স জমা দিতে হচ্ছে। রেশন কার্ডেরও আপডেটের কাজ শুরু হয়েছে। ফলে সরকারি স্তরে যা-ই হচ্ছে, সব কিছুর সঙ্গেই এনআরসিকে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের মিছিল, মিটিংয়ে সেই গুজব আরও পল্লবিত হচ্ছে। পথে, ঘাটে, বাজারে সবচেয়ে জনপ্রিয় আলোচনা এনআরসি।
কার্ডের জন্য লম্বা লাইন পড়ছে তমলুকেও। এনআরসি আতঙ্কে অনেকে লাইনে দাঁড়ালেও, স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জয়দেব বর্মন বলেন, ‘এনআরসির জন্য নয়, রেশন কার্ডের ভুল সংশোধনের জন্যেই মানুষ ভিড় করছেন। আমরা কোনও গুজবে কান না দিতে বলেছি।’ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে কোনও কোনও সরকারি অফিসে দালালচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ। ফর্ম ফিলআপের জন্য ২০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত দর হাঁকা হচ্ছে। ফোটোকপির জন্য কেউ ৬ টাকা আবার কেউ ১০ টাকা নিচ্ছে।
নদিয়াতেও এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হওয়ায় আধার কার্ড করার হিড়িকও লেগেছে। কৃষ্ণনগর মুখ্য ডাকঘরে আধার কার্ড করতে বা আধার কার্ড সংশোধন ইত্যাদি করতে আসা লোকজনের ভিড় গত কয়েকদিনে এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, রাত থেকেই হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে লোকজনকে।