প্রখ্যাত বাচিক শিল্পী ঊর্মিমালা বসু যাদবপুরের ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানোয় সোশ্যাল সাইটে তাঁকে নিয়ে কুৎসিত মিম বানাতে পিছপা হননি রাজ্যের গেরুয়া শিবিরের নেতা-মন্ত্রী থেকে শুরু করে দলের কর্মী-সমর্থকরা। এমনকী তাঁর সম্মান ও বয়েসের কথা মাথায় না রেখেই চলছে কদর্য ভাষায় আক্রমণ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঊর্মিমালা বসু সম্পর্কে অশ্লীল মন্তব্যের প্রতিবাদে ফেটে এবার পড়ল শিল্পী, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী মহল।
শুক্রবার বিকেলে অ্যাকাডেমির সামনে ‘রানু ছায়া’ মুক্তমঞ্চে এক প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত হন রজত বন্দ্যোপাধ্যায়, খেয়ালি দস্তিদার, মহালয়া চট্টোপাধ্যায়, সোনালি বিশ্বাস, শ্রীকান্ত আচার্য, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য প্রমুখ। ছিলেন ঊর্মিমালা বসু ও জগন্নাথ বসুও। ওই জমায়েত থেকেই আওয়াজ ওঠে, দিলীপ ঘোষকে ক্ষমা চাইতে হবে। দিলীপ ঘোষের শাস্তি চাই।
গতকাল প্রতিবাদ সভায় ঊর্মিমালা বসু বলেন, ‘প্রথম যখন এই অশ্লীল মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়, সেটা আমার ছেলেরা আমার কাছ থেকে আড়াল করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি শেষপর্যন্ত পেয়ে যাই। আমার খুব খারাপ লেগেছিল। আমি প্রথম থেকেই যাদবপুরের এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছি এবং এখনও করছি। আমি এতে ভয় পাইনি। আমার কণ্ঠও রুদ্ধ হয়নি। শুধু আমার ক্ষেত্রেই নয়, যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ববন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কেও কেউ এরকম অশালীন পোস্ট করে তখনও আমি প্রতিবাদ করি।’
তিনি আরও বলেন, “এই ‘যৌনদাসী’ শব্দটি আমায় অপমানিত করেছে ঠিকই। কিন্তু এ অপমান আমার একার নয়। এ অপমান রোজ ঘটছে কারও না কারও সঙ্গে। তাই অপমানে কণ্ঠ রুদ্ধ করা চলবে না। বরং এটাই সময়, আরও বেশি করে জোট বাঁধার।” তাঁর মতে, যৌনদাসী শব্দটির মধ্যে আলাদা ব্যঞ্জনা রয়েছে। এতে যেমন আছে ‘যৌন’ শব্দটি, তেমনই আছে ‘দাসী’ শব্দটিও। যা একযোগে মনে করিয়ে দেয় সিরিয়ায় আইএস জঙ্গীদের হাতে বন্দী অজস্র মুক্তিকামী নারীর অসহনীয় লড়াইয়ের কথা।
সঙ্গীত শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য বলেন, ‘এক সজ্জন মহিলা সম্পর্কে অত্যন্ত কুরুচিকর এই মন্তব্য। আমরা সবাই এই মন্তব্যের প্রতিবাদ করছি এবং ভবিষ্যতেও করব।’ আর খেয়ালি দস্তিদার বলেন, ‘এত কুৎসিত মন্তব্য কেউ করতে পারে তা ভাবা যায় না। আমরা এর প্রতিবাদ করছি।’ প্রতিবাদ সভা চলাকালীন দিলীপ ঘোষের শাস্তির দাবিতে সইও সংগ্রহ করা হয়। জানা গেছে, সই সংগ্রহ করে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ডেপুটেশন দিতে যাবেন প্রতিবাদকারীরা।