২০১৭ সালের আগস্ট মাস৷ সেসময় এক-দু’জন নয়, নিজের পকেটের টাকা দিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে এনে বাবা রাঘবদাস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বহু শিশুর প্রাণ বাঁচিয়ে সকলের চোখের মণি হয়ে উঠেছিলেন তিনি। রোগীদের পরিজন থেকে জাতীয় সংবাদমাধ্যম— তাঁর ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন সকলেই। কিন্তু অক্সিজেনের অভাবে একাধিক শিশুমৃত্যুর ঘটনায় ‘দোষীদের কঠোরতম সাজার’ আশ্বাস দেওয়ার অল্প পরেই রাতারাতি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ কাফিল খানকে। পাশাপাশি, উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের তরফে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল দুর্নীতি, কাজে ফাঁকি, প্রাইভেট প্র্যাকটিস এবং চিকিৎসায় গাফিলতির।
ঘটনার পরে পেরিয়ে গিয়েছে দু’-দু’টো বছর। এর মধ্যে ন’মাস জেলও খেটেছেন কাফিল। অসহনীয় যন্ত্রণার সেই জেল-জীবনের কথা প্রকাশও পেয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। জামিন পাওয়ার পরে সিবিআই তদন্তের দাবি করেছিলেন কাফিল। দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে গিয়েছিলেন, নিজের মনের জোরে। অবশেষে, এত দিন পরে নির্দোষ প্রমাণিত হলেন তিনি। সিবিআই অফিসার হিমাংশু কুমারের ১৫ পাতার রিপোর্ট জানিয়ে দিল, কাফিলের বিরুদ্ধে ওঠা চারটি অভিযোগের একটিও প্রমাণিত হয়নি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, কাফিল খান তাঁর কর্তব্যে গাফিলতি তো করেনইনি, বরং ১০ আগস্ট রাতে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে পরিস্থিতি যখন ভয়াবহ, তখন তা সামাল দেওয়ার সর্বোত্তম চেষ্টা করে গেছেন।
তাঁর প্রাইভেটে প্র্যাকটিস করা নিয়েও ওই রিপোর্ট বলেছে, ২০১৬ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করেছেন কাফিল। সরকারি হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় অন্য কোথাও প্র্যাকটিস করেননি। এবং সর্বোপরি, যে এনসেফ্যালাইটিস বিভাগে চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে, সে বিভাগের দায়িত্বে ছিলেনই না কাফিল খান। এখানেই শেষ নয়। সিবিআইয়ের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, যখন হাসপাতালে অক্সিজেন বিপর্যয় হয়েছিল, তখন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পদক্ষেপ করার আগে কাফিল তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছিলেন বলে প্রমাণ রয়েছে, কিন্তু কেউ কোনও পদক্ষেপ করেননি। এত দিন কাফিল খানের বিরুদ্ধে যা তদন্ত হয়েছে, যার ভিত্তিতে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তার কোনও তথ্য-প্রমাণই না মেলায় এবার তাঁকে ক্লিনচিট দিল সিবিআই।