ফের গণপিটুনি! আইন পাশ করিয়ে, নতুন বিল এনেও বন্ধ করা যাচ্ছে না এই রোগ। যার ফলে আরও একবার একসঙ্গে দু’-দু’টি প্রাণ শিকার হল উন্মত্ত জনতার রোষের এবং তাদের বয়স মাত্র ১২ এবং ১০। মধ্যপ্রদেশের শিবপুরী জেলার ভাবকেড়ি গ্রামে দুই দলিত নাবালিকা ও নাবালককে পিটিয়ে হত্যা করার নৃশংস ঘটনার খবর শুনে শিউরে উঠেছেন সকলে।
পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার ভোর সাড়ে ছ’টায় গ্রামের পঞ্চায়েত ভবনের সামনে ১২ বছরের রোশনি ও ১০ বছরের অবিনাশ শৌচকর্ম করছিল বলে অভিযোগ ওঠে। সেটাই চোখে পড়ে যায় কোনও এক পঞ্চায়েত কর্তার। তিনি চিৎকার করে লোক জড়ো করেন আচমকা। মারতে শুরু করেন ছেলেমেয়ে দু’টিকে।
পঞ্চায়েতের সব কর্মী, আশপাশের মানুষও ঘটনার কথা জানতে পেরে মারধর করে বাচ্চা দু’টিকে। অকথ্য মারের পরে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়ে ছিল রক্তাক্ত দেহ দু’টি। পুলিশ এসে তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে, সেখানে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় তাঁদেরকে। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হাকিম যাদব ও রামেশ্বর যাদবকে গ্রেফতার করেছে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ।
ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দায় মুখর হয়েছেন নেটিজেনরা। মধ্যপ্রদেশের ওই গ্রাম্য এলাকায় বেশির ভাগ বাড়িতেই শৌচালয় নেই। মাঠেঘাটেই শৌচকর্ম সারতে বাধ্য হন মানুষজন। ওই ছেলেমেয়ে দু’টিও তাই করছিল। কিন্তু তাঁদের অপরাধ ছিল, সেই জায়গাটা ছিল পঞ্চায়েতের সামনে। কিন্তু অপরাধ যা-ই হোক দু’টি ১০-১২ বছরের বাচ্চাকে স্রেফ পিটিয়ে মেরে ফেলার কি আদৌ কোনও যুক্তি হয়! কতটা অমানবিক হয়ে গেলে এমনটা করা যায়! এইধরনেরই প্রশ্ন উঠেছে নেট-দুনিয়ায়।
তবে নিহত শিশু দু’টির পরিবারের অভিযোগ, তাঁরা দলিত বলে বরাবরই বৈষম্যের শিকার ছিল। সেটাই চরমে পৌঁছয়, তাঁদের শৌচকর্ম করতে দেখে। অবিনাশের বাবা মনোজ বাল্মীকি বলেন, “বছর দুয়েক আগে গ্রামের একটি টিউবকল থেকে জল নেওয়া নিয়ে আমার সঙ্গে অভিযুক্তদের তুলকালাম ঝগড়া হয়েছিল। আমায় শাসিয়েছিল ওরা, এমনকি মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছিল।”
মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেস শাসিত রাজ্য হলেও জানা গেছে, ওই পঞ্চায়েত এলাকা ছিল বিজেপির অধীনে। আর যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই দুজনও এলাকার সক্রিয় বিজেপি কর্মী হিসেবেই পরিচিত। তাই এই ঘটনার নিন্দা করে বিজেপিকে এক হাত নিয়েছেন বসপা নেত্রী মায়াবতী। বিজেপির আস্কারাতেই দলিতেরা বারবার উচ্চবর্ণের হিংসার শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মাস দুয়েক আগেই চোর সন্দেহে ৫৮ বছরের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছিল এই মধ্যপ্রদেশেই। তার আগে, গত ১৮ জুন ঝাড়খণ্ডে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তবরেজ আনসারিকে। সম্প্রতি গণবিটুনি রোধে নয়া বিলও এসেছে বিভিন্ন রাজ্যে। তবুও কমছে না হিংসা। এবার ১০-১২ বছরের দু’টি বাচ্চার খুন যেন আরও বেশি করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, দেশের জনগণ ধীরে ধীরে কতটা অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে।