দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মাসখানেক আগেই আসামে প্রকাশিত হয়েছে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা। যাতে বাদ গেছে, ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের নাম। একসঙ্গে এত মানুষকে ‘নিজভূমে পরবাসী’ হতে দেখে আতঙ্ক বাড়ছে এ রাজ্যেও। এরই সঙ্গে অনুঘটকের মতো কাজ করছে বিজেপি নেতাদের ক্রমাগত হুঁশিয়ারি, যে বাংলাতেও এনআরসি হবে। ফলে যথাযথ নথি না থাকলেই নাগরিকত্ব হারানোর ভয় পাচ্ছেন অনেকে। ইতিমধ্যেই এনআরসি-আতঙ্কে এ রাজ্যে আত্মঘাতী হয়েছেন ৬ জন।
এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করতে অভয়বাণী দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আবারও বলেছেন, বাংলায় কোনও এনআরসি হবে না। তাই কারও কথায় নিজের অমূল্য জীবন নষ্ট করবেন না। তবে এখনও উৎকণ্ঠা কাটছে না বহু মানুষের। তাই তাঁরা ফোন করছেন ‘দিদিকে বলো’তে। কেউ জানতে চাইছেন, এনআরসির জন্য কোন কোন সরকারি প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। তার জন্য কোথায় যোগাযোগ করতে হবে। কাগজপত্র জমা দিতে না পারলে তাঁদের সত্যিই দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে কি না, তা-ও জানতে চাইছেন অনেকে।
এমন পরিস্থিতির মোকাবিলায় বাড়তি দায়িত্ব পালন করছে প্রশান্ত কিশোরের টিম। বস্তুত, এনআরসি প্রশ্ন তাদের কাজ একলাফে অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, এখন রোজ ‘দিদিকে বলো’তে যত মানুষ ফোন করছেন, তার সিংহভাগই এনআরসি সংক্রান্ত। তাই এ নিয়ে কেউ প্রশ্ন করলেই মুখ্যমন্ত্রীর অভয়বাণীর কথাই বলছেন ‘দিদিকে বলো’র দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। আবার, এনআরসি গুজবের মধ্যেই রাজ্যে নতুন রেশন কার্ড তৈরি এবং সংশোধনের কাজ শুরু হওয়ার জন্য বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে নবান্নের কর্তাব্যক্তিদের। রেশন কার্ডে নাম তোলার সময়সীমাও বাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার।
প্রথমে বলা হয়েছিল, ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন রেশন কার্ডের জন্য আবেদনপত্র জমা দেওয়া যাবে। নয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৭ সেপ্টেম্বরের পর পুজোর জন্য সাময়িক ভাবে রেশন কার্ডে নাম তোলার কাজ বন্ধ রাখা হবে। ৫ নভেম্বর থেকে ফের এই কাজ শুরু হবে। চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। খাদ্য দপ্তরের সচিব মনোজকুমার আগরওয়াল জানান, নতুন রেশন কার্ডের জন্য এ পর্যন্ত মোট ৩০ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে। নাম সংশোধনের জন্য আবেদন করেছেন ২৭ লক্ষ মানুষ। এগুলো ভালো করে পর্যবেক্ষণ করার পর নতুন রেশন কার্ড ইস্যু করা হবে।