টালা ব্রিজ নিয়ে তৈরি হওয়া আশঙ্কাই সত্যি হল। পুজোর আগেই টালা ব্রিজে ভারী যান চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন। বৃহস্পতিবার নবান্নে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর সাবধানতার খাতিরে ব্রিজে বাস ও ভারী যান চলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলেন প্রশাসনিক কর্তারা। এই কাজের জন্য টেন্ডার ডাকা হল পূর্ত দফতরের তরফে।
আজ নবান্নে মুখ্যসচিব মলয় দে’র নেতৃত্বে বৈঠকে এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। সেতুটির বেহাল দশা। সেকথা মাথায় রেখে আগেই বাস বাদে ভারী যানে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। এদিন নবান্নে ঠিক হয়েছে পুজোর আগেই ‘হাইট বার’ বসানো হবে টালা ব্রিজের উপরে। কেন্দ্রীয় সংস্থা রাইটসের সমীক্ষা অনুযায়ী যেকোনও সময় বিপদ ঘটতে পারে এই সেতুতে। তা এড়াতেই ভারী গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করছে সরকার। নবান্নে এদিন সমীক্ষা সংস্থা রাইটস, পূর্ত দপ্তর, কেএমডিএ, কলকাতা পুরসভা, কলকাতা পুলিশের কর্তারা হাজির ছিলেন।
নবান্নের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারী গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি না হলে হঠাৎ প্রবল বিপত্তি ঘটতে পারে। অন্যদিকে, এই সেতুর নিচে প্রায় দু’শো মানুষ থাকেন। তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করতে ‘হ্যাঙার’ তৈরি হবে। মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, সেতুর নিচে যাঁরা আছেন তাঁদের ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। কাউকে উচ্ছেদ করা হবে না।
মাঝেরহাট সেতু বিপর্যয়ের পর থেকেই নিয়ম করে কলকাতা-সহ রাজ্যের একাধিক সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গিয়ে তিন-চারদিন সেতু বন্ধ রাখতে হচ্ছে। চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে আমজনতা। জানা গিয়েছে, ব্রিজের স্বাস্থ্যপরীক্ষায় এবার ব্যবহার করা হবে বিশেষ যন্ত্র। কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞ সংস্থা রাইটস মোবাইল ব্রিজ ইউনিট নিয়ে পূর্ত দপ্তরের দক্ষিণ জোনের ৩২টি সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবে। তারাতলা ব্রিজ দিয়ে শুরু হয়েছে ‘হেলথ অডিট’। টালা সেতুর পর বেলঘরিয়া সেতু, বালি ব্রিজ, বারাকপুর সেতু, মধ্যমগ্রাম ব্রিজ, মোড়গ্রাম ব্রিজ ও মাতলা নদীর উপর সেতুরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে ‘মোবাইল ব্রিজ ইউনিট’ দিয়ে। এই ইউনিটের সুবিধা হল, গাড়িতেই ‘হাইড্রলিক প্রসেস ইউনিট’ আছে। গাড়ির মধ্যে থেকে হাতের মতো ক্রেন বেরিয়ে আসে। ক্রেনের সাহায্যে সেতুর যে কোনও জায়গার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা যায়। এই গাড়ি ব্যবহার করলে, সেতু বন্ধ রাখতে হয় না।
পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক জানান, ‘৮ ফুট উঁচু হাইট বার বসানো হবে টালা ব্রিজের দুপারে। খরচ ধরা হয়েছে ২৬ লক্ষ টাকা। ২১ দিনের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে হাইট বার। এই হাট বারের নীচ দিয়ে শুধুমাত্র ছোট গাড়ি যেতে পারে।’ বন্ধ হয়ে যাবে বাস ও লরি।