কোটি কোটি ভারতবাসীর শেষ বয়সের সঞ্চয় হল এলআইসি। আজ সেই এলআইসি নিজেই গভীর সঙ্কটের মুখোমুখি। শোনা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের ভুল নীতির কারনে আজ ডুবতে চলেছে এলআইসির মত সংস্থা।
কংগ্রেসের অভিযোগ, জীবন বিমা নিগম বা এলআইসির টাকা নিয়ে নয়ছয় করছে মোদী সরকার। গত সপ্তাহে সাংবাদিক বৈঠক করে এমনই অভিযোগ করেছেন কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন। এরপর থেকেই বিভিন্ন মহলে আতঙ্ক- ‘এলআইসি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে!’ গত বুধবার এক সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেনের অভিযোগ ছিল এলআইসির ভবিষ্যৎ সঙ্কটে ফেলেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কের দুই রিপোর্টকে হাতিয়ার করে এই অভিযোগ তোলেন মাকেন। অভিযোগ ছিল, ১৯৫৬ সালে গঠনের পর থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ছ’দশকে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় এলআইসির মোট ১১.৯৪ লাখ কোটি ঢালা হয়েছিল। তবে ২০১৯-এ তা আচমকা বেড়ে ২২.৬৪ লাখ কোটিতে পৌঁছয়। অর্থাৎ, মাত্র ৫ বছরেই ১০.৭ লাখ কোটি এলআইসির টাকা অন্যত্র বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেছে কংগ্রেস। তাদের দাবি, যে যে সংস্থায় এলআইসির অর্থ ঢালা হচ্ছে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে আইডিবিআই ব্যাঙ্কের কথা বলা হয়েছে। অনিল আম্বানির রিলায়েন্স নাভালকে ঋণ দিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত আইডিবিআই ব্যাঙ্ক। রিলায়েন্স নাভাল উঠে গেছে সাথে আইডিবিআইকেও ডুবিয়েছে। এরপর এর পরিত্রাতা হিসাবে এগিয়ে এলো এলআইসি। কর্পোরেট ঋণে জর্জরিত আইডিবিআই-এর ৫১% শেয়ার ২১,০০০ কোটি টাকা খরচ করে কিনে নেয় এলআইসি। যদিও তাতেও আইডিবিআই-এর সঙ্কট মেটেনি। ঋণের ভারে আরও লোকসানে তলিয়ে গেল আইডিবিআই। কংগ্রেসের অভিযোগ, সেখানেই লোকসানে ডুবেছে এলআইসি। আর এর মূল রয়েছে কেন্দ্র।
কংগ্রেসের এই অভিযোগের কারণেই চিন্তায় সাধারণ মানুষ। যদিও এলআইসি সূত্রে জানা গেছে, ‘দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। ভারতীয় জীবনবিমা নিগম এদেশের নিরাপদতম অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান।’ প্রসঙ্গত, এলআইসিতে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পলিসি হোল্ডারের সংখ্যা ২৮ কোটির বেশি। কর্মী সংখ্যা ১.১২ লাখ। এজেন্ট ১০.৭২ লাখ। এমন সংস্থার ভিত দুর্বলের অভিযোগে যে সাড়া পড়বে, তা স্বাভাবিক।
তবে প্রশ্ন উঠছে অন্য জায়গায়। এবছর এলআইসি হলে কি পরের বছর পিএফ-এর পালা? কারন পিএফ ফান্ডেও প্রচুর টাকা প্রতিনিয়ত জমা হয়। এই দুটো যদি মুখ থুবড়ে পড়ে ভারতের ৯০% মানুষের শেষ জীবনের সঞ্চয় শেষ হয়ে যাবে। তখন আর কোনো ধর্মীয় ধ্বনি তুলে দেশ বাঁচানো যাবে না। কারণ অর্থনীতির হাল ফেরাতে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো পদক্ষেপ এখনও অবধি চোখে পড়ছে না। কাশ্মীর, ৩৭০, ধর্মীয় জিগির নিয়েই আপাতত এরা মজে আছে।